পাঁচ কর্মীকে অপহরণ
অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর নৌ রুটে চরম উত্তেজনা
সওজ'র মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হাওড়াঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের হাওড়ের বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম রুটের ঘোড়াউত্রা নদীতে চলাচলকারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ফেরির পাঁচ কর্মীকে অপহরণ করে মারধর ও চাঁদা দাবির ঘটনায় দু'দিন ধরে চলছে উত্তেজনা। গত মঙ্গল ও বুধবার বিকাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে। অন্যদিকে একইসঙ্গে বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম নদীর ইঞ্চিনচালিত খেয়া নৌকার পাঁচ মাঝিকে আটক করায় বন্ধ থাকে খেয়া পারাপরও।
এ অবস্থায় কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় হাওড়বাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। অবশ্য জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে গত বুধবার বিকালে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে সওজ বিভাগ পুলিশ প্রহরায় পুনরায় ফেরি চালু করেছে।
এদিকে ফেরির পাঁচ কর্মীকে অপহরণ করে চাঁদা দাবির ঘটনায় সওজ বিভাগের পক্ষ থেকে গত বুধবার বিকালে বাজিতপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন সওজ'র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ওসমান মিয়া। মামলার এজাহারে চারজনের নাম উলেস্নখ করে আরও ছয়-সাতজন অজানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত মঙ্গলবার আটক করা নদীর খেয়াঘাটের তিন ব্যক্তিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ভৈরবের সাদেকপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, বাজিতপুরের পাটুলীর জাকির হোসেন ও নোয়াগাঁওয়ের জুয়েল দাস। এজাহারভুক্ত আরেক আসামির নাম খলিলুর রহমান।
পুলিশ ও সওজ বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানিকভাবে এ নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। ফেরি চালু করায় স্থানীয়ভাবে আগে থেকে পরিচালিত ইঞ্জিনচালিত খেয়ানৌকার ইজারাদারসহ অন্যদের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাঁধে। এর জের ধরে গত সোমবার রাতে আসামিরা বাজিতপুরের পাটুলী ঘাটে অবস্থিত সওজ'র ভবনে থাকা ফেরীর দুই কর্মী মস্তো মিয়া ও জামান মিয়াকে প্রথমে অপহরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গভীর রাতে আসামিরা ওই ভবনে হামলা চালিয়ে দু'জনকে অপহরণের পর হাত-পা বেঁধে নদীতে নিয়ে মারধর করে। এরপর নদীর অপরপারের জেলেপলস্নী আছানপুরের চরে ওই দু'জনকে রেখে এসে আসামিরা ফেরীর চালক রাকিব হোসেন মুন্না, খালাশি তোফাজ্জল মিয়া ও ফেরির ইজাদারের ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিনকে একই কায়দায় অপহরণের পর নৌকায় তুলে অকথ্য নির্যাতন চালায়। এজাহার মতে, আসামিরা অপহৃত পাঁচজনের কাছেই চাঁদা দাবি করে এবং নদীতে আর ফেরি না চালানোর হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় পরদিন জড়িত সন্দেহে খেয়াঘাটের পাঁচ কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এদের মধ্যে গত বুধবার করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকি দু'জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার বিকালে ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের নির্দেশে বাজিতপুর ইউএনও শামীম হুসাইন ও বাজিতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান পাটুলী ঘাটে গিয়ে পুলিশি পাহারায় ফেরী চালু করেন।
বাজিতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান জানান, অপহরণ, চাঁদা দাবি ও ফেরী বন্ধের হুমকির অভিযোগে সওজ বিভাগ মামলা করেছে। মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ পাহারায় ফেরি চালু করা হয়েছে।
উলেস্নখ হাওড়ে লোকজনের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম ফেরি। হাওড়ে ঘুরতে আসা শত শত পর্যটক প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন।