নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ঢাকার অতি নিকটতম উপজেলা। উন্নয়নের ছোঁয়ায় দিন দিন এখানকার পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক উন্নয়ন হলেও দলিলের উৎসে কর বৃদ্ধি হওয়ায় কমেছে জমি ক্রয়-বিক্রয়। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম অনেকটাই কম। বর্তমানে কিছু হেবা দলিল ও দায় মোচন (রিডামশন) দলিল সম্পাদনের মধ্যেই এ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে।
খবর নিয়ে দেখা যায়, রূপগঞ্জ পূর্ব ও রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন মুড়াপাড়া, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, তারাবো, কাঞ্চন, তারাবো, ভোলাবো, দাউদপুর, রূপগঞ্জ ও কায়েতপাড়া এলাকায় ১৪৬টি মৌজায় কাঠাপ্রতি ১-৪ লাখ টাকা জমির শ্রেণিভেদে উৎসে কর আরোপ করায় জমি কেনাবেচার পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সঙ্গে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। এই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। আগে যারা এখানে জমি কিনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসন গড়ার আগ্রহ দেখাতেন তারা এখন রেজিস্ট্রি খরচের ভয়ে এই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে চলতি অর্থবছরের রাজস্বের পরিমাণ বিগত সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
মুড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, 'মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য ২ কাঠা জমি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উৎসে কর বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি বিক্রি করা যাচ্ছে না।'
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বরুনা গ্রামের আমির হোসেন বলেন, 'আমার পারিবারিক প্রয়োজনে ঢাকার এক ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করার জন্য বায়না বাবদ টাকা নেই। কিছু দিন পরেই সরকার জমির উৎসে কর বৃদ্ধি করে। ক্রেতা এখন আমার জমি রেজিস্ট্রি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এখন এত উৎসে কর দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে পারবেন না বলে জানান।'
দলিল লেখক কৃষ্ণ গোপাল শর্মা বলেন, গত ১ বছর পূর্বে দলিলে সকল খরচ ছিলো লাখে সাড়ে ৯%। দলিলের উৎসে কর বাড়ানোর পর থেকেই সাব কবলা দলিল একেবারেই কমে গেছে। তবে হেবা দলিল ও দানপত্র দলিল কিছু হচ্ছে। তবে সরকার যদি উৎসে কর কমিয়ে দেয় তাহলে জমি ক্রয়-বিক্রয় বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
দলিল লেখক মোস্তফা বলেন, রূপগঞ্জের কিছু এলাকায় জমির মূল্যই আছে কাঠায় ১ লাখ টাকা। সেখানে সরকারকে উৎসে কর দিতে হয় কাঠা প্রতি ১লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি রেজি ফি, স্ট্যাম্প ফি, স্থানীয় কর বাবদ দিতে হয় সাড়ে ৫%। এতে জমি ক্রেতাদের খরচ অতিরিক্ত বেশি হচ্ছে। যার কারণেই আমাদের দলিল লেখা অনেকটাই কমে গেছে।
রূপগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান রিপন বলেন, রূপগঞ্জ পূর্ব ও রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে বিঘা প্রতি উৎসে কর দিতে হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। কোনো কোনো এলাকায় জমির মূল্যই আছে বিঘা প্রতি ২০ লাখ টাকা। সাধারণ মানুষ এ উৎস কর দিতে পারছে না। তাদের কষ্ট হচ্ছে। এখানে জমি ক্রয়-বিক্রয় একেবারেই কমে গেছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ পূর্ব সাব রেজিস্ট্রার মাইকেল মহিউদ্দিন আব্দুলস্নাহ বলেন, এখানে পূর্বে গড়ে ৪০-৫০টি সাব কবলা দলিল হতো। বর্তমানে ৫-১০টি দলিল হচ্ছে। তবে হেবা দলিল ও দানপত্র দলিল হচ্ছে। সরকার যদি এ উৎস কর কমিয়ে আনে তাহলে এখানে জমি ক্রয়-বিক্রয় বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব বেশি আদায় হবে।