দৌলতপুর ও রামগড়ের মাঠ জুড়ে হলুদের সমারোহ

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও খাগড়াছড়ির রামগড়ে বেড়েছে সরিষার আবাদ। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ চাষাবাদ হযেছে। এ দুই উপজেলার মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। ভালো ফলনের মতো দামও ভালো পেলে লাভবান হওয়ার আশা কৃষকদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বেড়েছে সরিষার চাষ। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন ঢেকে গেছে সরিষা ফুলের হলুদ চাদরে। সুন্দর এই দৃশ্য আকৃষ্ট করছে সব ধরনের পথচারীদের। সরিষাক্ষেতে এসে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরে। তুলনামূলক কম খরচ আর অল্প সময়ে ফসল ঘরে উঠায় উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এবার উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে ২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। সরকার থেকে সহায়তা করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৪০ জন সরিষা চাষিকে। কোনো রোগবালাই না হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে এবার ৩ থেকে ৪ মণ হারে সরিষা উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশি চাষ হয়েছে ফিলিপনগর, মরিচা, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরে। শুধু এসব এলাকাতেই ৬২১ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষি তারিফ ইসলাম জানান, সরকারি সহায়তা নিয়ে এবার এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। গাছ ভালো হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন। তিনি আরও জানান, আমন ধান কাটার পর পরই বোরো আবাদের আগ পর্যন্ত জমি ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করেছেন। এ বছর তার বাজারের বাড়তি দামে ভোজ্যতেল কেনার প্রয়োজন পড়বে না জানান। মুক্তার হোসেন নামের আরেক চাষি বলেন, এবার সরিষার ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মূলত এটা একটা বাড়তি ফসল হিসেবে আমরা চাষ করি। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ সরিষা ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি সহায়তা ও কৃষি অফিসের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির কারণে দিনে দিনে সরিষার আবাদ বাড়ছে। আমরা চাষিদের সব সময় রোগবালাই প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে আসছি। রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এ বছর ২৫৫ জন কৃষক ৩৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ করেছেন। ১৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণের বেশি। ৬০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কৃষকদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগড় পৌরসভা ও দু'টি ইউনিয়নে ২৫৫ জন কৃষক প্রায় ৩৭ হেক্টর জমিতে বারি ১৪, ১৭, ১৮ বীনা ৯ ও ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। সরেজমিনে পৌর এলাকার ফেনীর কুল, সদু কারবারিপাড়ার কয়েকটি সরিষা ক্ষেতে দেখা যায়,মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদ ফুল। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বেড়িয়ে মধু সংগ্রহ করছে। কৃষক মকবুল হোসেন জানান, আমন ধান কাটার পরে বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস জমি অনাবাদি থাকে। এই সময়টাতে সরিষা আবাদ করে স্বল্প সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায়। এতে জমিও অনাবাদি থাকে না, আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফ উলস্না বলেন, কৃষকদের তেলবীজ শস্য চাষে আগ্রহী করতে সরকারিভাবে প্রণোদনার সরিষা ও সূর্যমুখী বীজ বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা কম এবং সরিষা ভাঙানোর সমস্যায় এতদিন কৃষকরা এ ফসল চাষে আগ্রহ দেখাননি। বর্তমানে রামগড় বাজারে ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা ভাঙানোর বৈদু্যতিক ঘানি স্থাপনে কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কৃষি বিভাগ শুধু সরিষা নয় কৃষি সংক্রান্ত কৃষকের যেকোনো সমস্যায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা দিয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবার সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। আমরা যদি দেশে তেল উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে বৈদেশিক নির্ভরতা কমবে, খরচও বাঁচবে। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।