আখাউড়ায় আট স্কুল ভবন পৌনে ২ লাখে বিক্রি!
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন স্কুল ভবন মাত্র এক লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা বাস্তবে বাজার মূল্য থেকে অনেক কম হয়েছে। সরকারি নিলামের পরে ওই নিলামকারীদের মধ্যে আবার ফিরতি নিলামে ওই ভবনগুলো ক্রয় মূল্য থেকে ১০-১২ গুণ বেশি দামে বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ১০-১২ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। একটি মহলকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য নিলাম কমিটি ভবনগুলোর ভিত্তি মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
জানা যায়, ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রকাশ্য নিলামে ওই ভবনগুলো বিক্রি করা হয়। সে সময় নিলাম কমিটির সভাপতি ও ইউএনও রাবেয়া আক্তার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন, উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
নিলামে রাঁধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়গড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটামাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রি করা হয়। ৯২ জন ডাককারী নিলামে অংশ নেয়। ৮টি ভবনের ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৬৮ হাজার ১১৬ টাকা। ভিত্তি মূল্যের চেয়ে মাত্র আটশ' থেকে তিন হাজার টাকা বেশি মূল্যে এসব ভবন বিক্রি করা হয়। ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩৩ হাজার টাকার মধ্যে এসব ভবন বিক্রি করা হয়।
আরও জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট নিলাম কমিটিকে ম্যানেজ করে কম দামে স্কুল ভবনগুলো নিলামের মাধ্যমে কেনেন।
পরবর্তীতে তারা নিজেদের মধ্যে 'ফিরতি নিলাম' করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। একটি সূত্র জানায়, ফিরতি নিলামে একটি ভবন এক লাখ থেকে দুই লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়।
সরেজমিন নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও বারান্দাসহ ২৬ ফুট প্রস্থ দুই চালা টিনশেডের পাকা ভবন। ৫টি শ্রেণি কক্ষ। কাঠে ৫টি দরজা, ১৪টি জানালা রয়েছে। বারান্দায় টিনের চালা। বারান্দার টিনগুলো এখনো নতুন রয়েছে। এ ভবনটি ৩০ হাজার টাকায় নিলামে কিনেছেন ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান।
স্কুল মাঠে সুহেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, দরজা-জানালাগুলোই এর চেয়ে (৩০ হাজার) বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।
মোগড়া ইউনিয়নের জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও বারান্দাসহ ২৬ ফুট প্রস্থ। উপরে ছাদ। ৪টি শ্রেণি কক্ষ। স্টিলের ৪টি দরজা ও ১৬টি জানালা রয়েছে। এই ভবনটি যথেষ্ট ভালো। এটি ২৮ হাজার ৫০০ টাকা নিলাম দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের সামনে জাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মিয়ার দোকান। দাম শুনে তিনি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, 'দামটা অনেক কম হয়েছে।'
রাধানগর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবনের কিছু অংশসহ টিনশেডের পুরাতন ২টি ভবন ৩৩ হাজার টাকায় নিলাম দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ ফুট লম্বা টিনশেডের ভবনটি মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনার কলি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মূল্য নির্ধারণ করেছে, তারা ভালো বলতে পারবে। তবে দামটা কম হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি এখানে নতুন। নিলাম হওয়া বিদ্যালয় ভবনগুলো সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। উপজেলা প্রকৌশলী মূল্য নির্ধারণ করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, নিলাম ডাকের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। ভবনগুলো মাপঝোক করে রেট সিডিউল অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য উপজেলায়ও এভাবেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আখাউড়া ইউএনও ও নিলাম ডাক কমিটির সভাপতি রাবেয়া আক্তার বলেন, যারা টেকনিক্যাল লোক তারা মূল্য নির্ধারণ করেছে। ভিত্তিমূল্যের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করা হয়েছে। ভিত্তি মূল্যের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নিলাম কমিটি একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মূল্য নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখেছি। মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা সেটা দেখব।