ফুলচাষিদের মাথায় হাত
গদখালীতে গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মিলন রহমান, যশোর
ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীতে গোলাপ চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসের আগে পচন রোগে গোলাপ গাছের ডাল, পাতা ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ ক্ষেতের ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেসব ক্ষেতে গোলাপ ফুটেছে তার পরিমাণও কম। এসব কারণে হাসি নেই চাষিদের মুখে। অতিমাত্রায় শীত, কুয়াশা ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ক্ষেতের এই সর্বনাশ ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের গোলাপ চাষিদের মুখে হাসি নেই। ছত্রাকের আক্রমণে অধিকাংশ বাগানের গোলাপ নষ্ট হয়ে গেছে। যাদের বাগানে ফুল ফুটেছে সেটাও পরিমাণে কম।
কৃষকদের দাবি, কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিংবা তাদের দেওয়া পরামর্শে প্রতিকার মিলছে না। অধিকাংশ কৃষকের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আসেন না। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চাষিরা নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ বাগান। সাদা ক্যাপ মোড়ানো গোলাপের কুঁড়ি বাতাসে দুলছে। তবে কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার গোলাপের উৎপাদন কম। পচা রোগে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। গাছের পাতা, ডাল কিংবা কুঁড়ি পচে ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সমাধান।
পটুয়াপাড়া গ্রামের ওমর আলী এক বিঘা জমি বাৎসরিক ২০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি জানান, এ বছর গোলাপ গাছে পচা রোগ লেগেছে। গাছের পাতা, ডাল, কুঁড়ি পচে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের ওষুধ দিয়েও আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কাউকেই মাঠে দেখেননি। তারা কোনো পরামর্শও দেয়নি। নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন।
নীলকণ্ঠনগর গ্রামের সাদেক হোসেন ২৫ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি দাবি করেন, লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ফুলও তিনি তুলতে পারেননি। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই সব পচে গেছে। যেটুকু ফুল ফুটেছিল তাও রোগাক্রান্ত, ফলে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি।
নীলকণ্ঠনগর গ্রামের শিক্ষার্থী চয়ন হোসেন জানান, ১৫ কাঠা জমিতে তাদের গোলাপের চাষ রয়েছে। এই বাগানের বয়স অন্তত দশ বছর। এবছর পচা রোগের কারণে ফুল উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু খরচ হয়েছে বেশি। অতি কুয়াশার কারণেই পচা রোগ লেগেছে। প্রথমে গাছের পাতায় কিছু কালো দাগ আসে। এরপর ধীরে ধীরে পাতা পড়ে কান্ডে পচন লাগে। তারপর ফুল ফোটার আগেই কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
পটুয়াপাড়া গ্রামের শাহাজান আলী জানান, গত বছর এই মৌসুমে ২৫ কাঠা জমিতে ৮ হাজার গোলাপ ফুলে ক্যাপ পরিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর মাত্র ৩ হাজার গোলাপে ক্যাপ পরাতে পেরেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এমন খারাপ অবস্থায়ও কোনো অফিসার আসেননি বাগানে। পচা রোগে পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। এতে অধিকাংশ কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো থাকছে সেগুলো শক্ত হয়ে আর ফুটছে না।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এই অঞ্চলে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়। এ বছর অতিশীত ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ও গস্নাডিওলাস চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গাছের কান্ড, পাতা, ও ফুলের কুঁড়ি পচে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আশানুরূপ গোলাপ উৎপাদন হয়নি।
তিনি বলেন, কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে দ্রম্নত ফুল তোলার জন্য যারা বেশি মাত্রায় সার ও সেচ দিয়েছেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কম-বেশি সবার ক্ষেতেই ক্ষতি হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অর্ধেন্দু পাঁড়ে জানান, গোলাপ গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। কৃষকরা কথা শোনেন না। তারা অতিমাত্রায় সার, কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে গাছের পাতায় স্তর তৈরি হয়ে গেছে। ফলে সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছ খাবার তৈরি করতে পারে না। তবে গরমের আবহাওয়া আসার সঙ্গে সঙ্গে পচা রোগ ঠিক হয়ে যাবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, অতিবৃষ্টি আর কুয়াশার কারণে গোলাপ গাছে পচন রোগ ধরেছে। চাষিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা মাঠ পরিদর্শন করেছি। যেসব বাগানের বয়স এক বছরের কম সেসব বাগান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এই রোগের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।