সেচপাম্পে বিদু্যৎ সংযোগ না দেওয়ার অভিযোগ

২৫০ বিঘা জমির বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নলকূপের সেচ পাম্পে বিদু্যৎ সংযোগ না দেওয়া ও বিকল সেচযন্ত্র পুনরায় মেরামত না করার অভিযোগ উঠেছে। এতে উপজেলার ২৫০ বিঘা জমির বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় কৃষকরা। বিএমডিএ গভীর নলকূপ ও নদীতে স্থাপিত এলএলপি নলকূপের অপারেটর ও ম্যানেজারদের অভিযোগ বিএমডিএ গাইবান্ধা রিজিয়নে আর্থিক লেনদেন ছাড়া সেবা দেওয়া হয় না। চলতি বোরো মৌসুমে সব দিকে ধান লাগানো প্রায় শেষ হলেও সাঘাটা উপজেলার রামনগন গ্রামের বিএমডিএ'র দুটি নলকূপে গত ৫ মাসেও সেচ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে গত আমন মৌসুমে ২৫০ বিঘা জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো সংযোগ না দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ২৫০ বিঘা জমির বোরো ধান চাষ। ফলে ক্ষতিতে পড়েছেন কৃষকরা। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের। তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে বিএমডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমার সঙ্গে তাদের কোনো কাজ নেই। বিষয়টি সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের দায়িত্বে আছে।' সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক আনছার আলী বাঙ্গালী নদীবেষ্টিত চরে ১৫ বিঘা জমিতে গত বছর আমন ধান চাষ করে পানির অভাবে ফলন পাননি। যেখানে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা, সেখানে ধান পেয়েছেন এক থেকে দুই মণ। কৃষক আনছার আলী জানান, 'আমি বরেন্দ্র এলএলপি অপারেটর। গত তিন মাস ধরে ট্রান্সফরমান বৈদু্যতিক খুঁটিতে তোলার বিষয়ে বরেন্দ্র অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা বিষয়টি কর্ণপাত করেনি। ফলে এই বরেন্দ্র সেচ পাম্পটি বন্ধ থাকায় আমার কয়েক লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।' রামনগর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান জানান, 'সেচ সংযোগ না থাকায় আমি আমন মৌসুমে জমিতে পানি দিতে পারিনি। ফলে আমার ১০ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি বারবার যোগাযোগ করেও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমার ক্ষেতে পানি দেয়নি।' রামনগর বরেন্দ্র সেচ পাম্পের মাঠ পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, 'অফিসে মালামালের চাহিদা দিয়ে কয়েক সপ্তাহ হয়রানির পরে কৃষকের সেচ অব্যাহত রাখতে নিজ খরচে ১০ হাজার ৮শ' টাকার মালামাল ও ১০ হাজার টাকা শ্রমিক খরচ করে সেচ চালু করি। কিন্তু এখনো সেচ কার্যপরিচালনায় বিভিন্ন যন্ত্রের প্রয়োজন। বিএমডিএ গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আর্থিক লেনদেন ছাড়া সরকারি সেবা আমরা পাই না। ফলে কৃষকদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।' বরেন্দ্র অপারেটর মোজাম্মেল হক জানান, 'বিএমডিএ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না। যারা টাকা দেন তারা সেবা পান। যারা দেন না তারা সেবা পান না।' বিএমডিএ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'রামনগরের নলকূপের বিষয়টি সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বে থাকা মোখলেছুর রহমান দেখেন। আমার সঙ্গে লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ট্রান্সমিটার চুরি হওয়ার ফলে মৌসুম শেষে খুলে রাখা হয়। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে সেচপাম্প সচল করা হবে।' সাঘাটার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান 'আমি রামনগর গ্রাম পরিদর্শন করেছি। দ্রম্নত সময়ে বিদুৎসংযোগ দেওয়া হবে।' গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপ-পরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম জানান, শিগগিরই বিদুৎ সংযোগ দেওয়াসহ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।