স্বাভাবিক জন্ম হলেও ভাগ্য বাধসাধে মোহনের। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারান মোহন। মেধাবী সন্তানকে সুস্থ, স্বাভাবিক করতে চেষ্টার কমতি ছিলা না পরিবারের। তবুও সব হারিয়েও সন্তানের চক্ষুদান করতে ব্যর্থ মোহনের পরিবার। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে এখন নিঃস্ব পরিবারটি। সন্তানের অসুস্থতা আর আর্থিক শোকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ঘরে বসে থাকা বাবা-মায়ের এখন একমাত্র সম্বল সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ফুচকা বিক্রেতা শারীরিক প্রতিবন্ধী মিরাতুল ইসলাম মাউন মোহন (১৪)।
মোহন ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মুনশিদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও মহিতন খাতুন দম্পতির তৃতীয় সন্তান। সে দাশুড়িয়া মোকাররম মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের ৭-ম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল শেষে দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড় এলাকার ফুটপাতে চটপটি, ফুচকা ও ঝালমুড়ি বিক্রি করে অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করেন প্রতিবন্ধী মোহন।
জানা যায়, দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড়স্থ ফুটপাতে তিন চাকার ভ্যানের ওপর পরিষ্কার ও পরিপাটি করা আলোক সজ্জাবেষ্টিত একটি ঝালমুড়ির দোকান মোহনের। চোখে চশমা পরিহিত মিষ্টভাষী মোহনকে ঘিরে রেখেছেন খদ্দেররা। সবাইকে খুশি রেখে গভীর মনোযোগে মোহন চাহিদা অনুযায়ী সুস্বাদু, মুখরোচক খাবার পরিবেশন করছে।
শারীরিক ত্রম্নটি নিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি এমন একটি ব্যবসা এবং এর পেছনের গল্প জানতে চাইলে মোহন যায়যায়দিনকে বলে, আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জন্ম হলেও ভাগ্য তাকে এই উপহার দিয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। সে সময় মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। মাথার সেই আঘাতের চিকিৎসা চলাকালে থেকেই বা দিকের চোখের আলো কমতে থাকে। যেটা এখন আর কোনো কাজই করে না।
মোহন আরও জানায়, তার চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারও নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই পরিবারের রুজির দায়িত্ব এখন তারই। বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সরকারিভাবে কোনো প্রকার সহযোগিতা পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোহন বলে, এ বছরও ১২৮০ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। একজনকে ৫ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করলেও অন্য কোনো সুবিধা এখনো পায়নি। তবে সরকারি অন্য সুবিধাগুলো পেলে জীবনের সংগ্রামটা হয়তো কমে যেত।
মোহনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমি অক্ষম হয়ে গেছি। মোহনকে সুস্থ করতে সব শেষ। তবুও এখন মোহনই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।'
দাশুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া একজন প্রতিবন্ধী নাগরিকের অধিকার। আমি সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। ঈশ্বরদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খন্দকার মাসুদ রানা বলেন, প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড হলে সে ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে সে ভাতা পাবে।