রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি

কমছে খাদ্য উৎপাদন ধ্বংস হচ্ছে সড়ক বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
স্বদেশ ডেস্ক
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি

দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি। এর ফলে একদিকে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ, অন্যদিকে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে এসব মাটি পরিবহণে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। সেই সঙ্গে পরিবহণের সময় মাটি উড়ে নষ্ট করছে পরিবেশ। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। শিগগিরই এসব বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা। কুষ্টিয়া জেলায় ১৭০টি ইটভাটার মধ্যে ১৪৮টি ভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে ভেড়ামারায় ৩৪টি ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এছাড়াও ভাটায় করাত কল দিয়ে কাঠ ফাড়ানো হচ্ছে। এবছর ভেড়ামারা উপজেলায় কোনো ভাটায় অভিযান পরিচালনা হয়নি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ২২টি ভাটা। বাকি ১৪৮টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ইটভাটা পরিচালিত হয়। অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ। অবৈধভাবে ভেড়ামারায় ৩৪টি ভাটা পরিচালিত হচ্ছে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের চোখের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে, ঘনবসতি এলাকায় ও ফসলের মাঠের কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ বান্ধব কয়লার বিপরীতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধ ট্রলির মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমির মাটি এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। শুধু তাই নয়, নদী ও সরকারি জায়গায় প্রভাবশালী কয়েকজন গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। এছাড়া সরকারি জায়গার মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। দিনে ও রাতের আধারে ড্রাম ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন। সড়কগুলোতে এসব অবৈধ যানবাহনের বে-পরোয়া চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আইন আছে কিন্তু কেউ মানে না। প্রতিবছরের মতো এবারও ইট তৈরির মৌসুমে প্রতিদিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে না। কৃষি জমিতে ইটভাটা করলে কৃষি জমির ফলন হ্রাস পায়।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে এজমা ও এলার্জি রোগ হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাবিবুল বাশার বলেন, অবৈধ সব ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী এসব ভাটার নেই কোনো অনুমোদন। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিন ফসলি কৃষি জমিতে গড়ে তোলা ২৬টি ইটভাটা কিভাবে চলছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তাছাড়া এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অন্যদিকে ভাটার মাটি ও ইট পরিবহণে কয়েক শতাধিক শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি দৌলতপুরের সড়কগুলোতে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের আল সালেহ মামুন, ইদবার আলী, আনারুল ইসলাম, অবৈধভাবে সাদিপুর গ্রামেই তিন ফসলি জমিতে জনবসতি এলাকায় চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। পাশের স্বরূপপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার ও বজলুর রহমান এবং নুরুল ইসলাম তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেন। ফলে এই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সম্পূর্ণ আবাদি জমিতে জহুরুল, ইয়াছিন আলী ও আব্দুলস্নাহ, খান পাড়ায় জলস্নাদ খান চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। দৌলতপুর কলেজ ও দাখিল মাদ্রাসার পাশে আব্দুল হান্নান ও চক দৌলতপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে রমজান আলী, দৌলতপুর থানার পূর্বপাশে অর্পিত সম্পত্তিতে নজরুল ইসলাম, রিফাইতপুর জোয়াদ্দার পাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলাম ওলি, পামের গলাকাটি মোড়ে ঝুমুর আলী, আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম, বড়গাদিয়ায় হাবলু মোলস্না, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, জয়রামপুরে কান্টু মোলস্না, ডাংমড়কায় কুষ্টিয়া প্রাগপুর সড়কের সঙ্গে সমেদ আলী, ফজলুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছেন। এছাড়া আলস্নারদর্গা চামনা এলাকায় নুরুজ্জামান বিশ্বাস অটো ইটভাটা স্থাপন করেন। সাদিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোনো ফসলের আবাদ করতে পারছেন না। এদিকে, ড্রাম ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় পরিবহণ করায় সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সিনিয়র কেমিস্ট হাবিবুল বাশার জানান, কোন ইটভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। খুব শিগগিরই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও মো. ওবায়দুলস্নাহ জানান, ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি ব্যবহার এবং কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা চলমান আছে। দুই-এক দিনের মধ্যে তা আরও জোরদার করা হবে।

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অনুমোদনহীন অবৈধ ইটভাটায় আবাদি জমির পলিমাটি বহনে ব্যহহৃত হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। অন্যদিকে সড়কগুলো ধ্বংস হচ্ছে। চাষের জন্য ট্রাক্টরগুলো চীন থেকে আমদানি হলেও সারাদেশে এগুলো সড়ক দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার ২২টি ইটভাটার জন্য আবাদি জমি থেকে উর্বর পলি মাটি বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। ট্রাক্টরের ধুলাবালিতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। উপজেলা জুড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসন নির্বিকার।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চল ইট ভাটা অধু্যষিত এলাকা ও পশ্চিমাঞ্চল বালু ব্যবসা জমজমাট হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র ট্রাক্টরগুলো অবাধে চলাচল করছে। আষ্টা-গলস্নাক-কামতা-গলস্নাক, ফরিদগঞ্জ-গাজীপুর-চান্দ্রা, ফরিদগঞ্জ-রূপসা-খাজুরিয়া, ফরিদগঞ্জ-কালিরবাজার, ফরিদগঞ্জ-ধানুয়া-বাঘড়া বাজার সড়কে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের বিচরণ বেশি। ফলে এ সড়কগুলোর অবস্থা বছরের বেশিরভাগ সময়ই জরাজীর্ণ থাকে এবং সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে।

এদিকে উপজেলার ২২টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশই অনুমোদনহীন। পরিবেশ রক্ষা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একদিকে চিমনি ব্যবহার না করে পরিবেশ দূষণ করছে। অন্যদিকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার ভেতর ও বাইরের কৃষি জমি থেকে ইটভাটার জন্য অব্যাহতভাবে উর্বর পলি মিশ্রিত মাটি কিনছে। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে আবাদি জমি, অন্যদিকে মাটি কেটে নেওয়ায় নিচু হয়ে যাচ্ছে জমিগুলো।

উপজেলার বালিথুবা, সুবিদপুর, গুপ্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির (৪৫), সাইফুল ইসলাম (৫৫), মিজানুর রহমান (৩৯) সহ বেশকয়েকজন বলেন, প্রতিদিন ভোর হতে শুরু হয়ে যায় ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য। এ কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কলেস্নাল কিশোর সরকার জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ উর্বর জমির মাটি রক্ষায় নানা উদ্যোগ এবং মাটি কাটায় বাঁধা দিলেও কার্যত কোনো কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করেছেন।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএস তসলিম আহমেদ জানান, মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপনের পর পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটার কারণে প্রতিবছরই কমছে কৃষি জমি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন করে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র নেই। ভাটা তিনটির মালিক আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ভাটার কারণে কমে গেছে আশপাশের কৃষি জমির ফলন। পাশাপাশি, ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গভীর রাতে দুই ও তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ভাটায়। এসব মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। উপজেলার তিনটি ভাটাই বলড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ভাটাগুলো হলো- স্বাধীন ব্রিকস, সততা ব্রিকস ও আমিন ব্রিকস। গত কয়েকবছরে শুধু বলড়াতেই কমেছে অন্তত ১০ একরেরও বেশি ফসলি জমি। এসব মাটি কেটে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ভাটা নির্মাণের পর থেকে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। ফসলি জমির মাটি দিয়েই ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হয়। ইট পোড়ানো ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অনেক সময় জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয় কৃষকদের। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রম্নত ভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লতিফ মোলস্না বলেন, 'গতবছর আমার জমির পাশের জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আমার জমির কিছু অংশ ধ্বসে পড়েছিল। পরে ইটভাটার পার্টনার সজিব বলেছিল জমি বেঁধে দেবেন। আর দেননি। এ বছর আবার মাটি কাটার জন্য আমার জমি ধ্বসে পড়েছে। তারা ইচ্ছা করেই এমনভাবে মাটি কাটে, যাতে চারপাশের জমি ধসে পড়ে এবং তাদের কাছেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে।'

ধসে পড়া আরেক জমির মালিক মোশাররফ বলেন, 'আমার ২০ শতাংশ জমির একাংশ ধসে পড়েছে। গভীর রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে মাটি কাটে যাতে পাশের জমির মাটি ধসে পড়ে। এরপর জমির মালিকরা যাতে তাদের কাছেই জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাতের বেলায় আমাদের পক্ষে তো আর জমিতে গিয়ে বসে থাকা সম্ভব না।'

এ বিষয়ে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সেটা এসি ল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছে, তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এসি ল্যান্ড তাপসী রাবেয়া বলেন, অবৈধ এ বিষয়গুলোতে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

বাজিতপুর-নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ও নিকলীর বিভিন্ন হাওড়ে ভেকু দিয়ে কৃষি জমি মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একদল মাটি খেকো। এই কৃষি জমির উপরিঅংশ বা টপসয়েল নিয়ে যাওয়ার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। পাশের জমির মালিকরা এসব প্রভাবশালী মহলকে বাধা দিলেও তারা সে সব জমির মালিকদের বাধা উপেক্ষা করে নির্বিচারে জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্য জমি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন বার বার জরিমানা করলেও পরক্ষণে তাদের বাধাকে উপেক্ষা করে রাতের আধারে এসব শত শত জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ভেকুর মালিকরা রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী হওয়ায় এসব মাটি কাটার কাজ বন্ধ হচ্ছে না। এর ফলে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনিভাবে ইরি বোরো ধানের ফসলও দিন দিন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে