পাহাড়ে অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে সরিষা
প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে উন্নত জাতের সরিষার ক্ষেত। সবুজের পাদদেশে এসব ক্ষেতে ফুটেছে হলুদ ফুল। বিস্তীর্ণ জমিতে যেন হলুদের রঙছটা। স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষা চাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির লংগদুতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষক। সরকারিভাবে বিশেষ প্রদর্শনী পস্নট ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে। পাহাড়ে বেশিরভাগ জমিতেই বিনা-৯, বারি-১৪, ১৭ এবং মাঘী জাতের সরিষার আবাদ করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে লংগদুর আটারকছড়া ও লংগদু ইউনিয়নের পাহাড়ি পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর লংগদুতে সরিষার আবাদ বেড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও অধিক।
সরিষা চাষে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের মহাজনপাড়া এলাকার প্রান্তিক কৃষক পরমেশ্বর চাকমা। ব্যক্তি উদ্যোগে ও প্রণোদনার ৪০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন এ কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ থেকে সার, বীজ ও কীটনাশক পাওয়ায় সন্তুষ্ট তিনি।
৪০ শতক জমিতে সরিষা চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরিষা চাষে আগ্রহী হলেও আর্থিক সংকটে অনেকেই সরিষা চাষ করতে পারছেন না। সরকারিভাবে প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা সরিষা চাষ করে আর্থিক সচ্ছলতা পেতেন।
একই এলাকার সফল সরিষা চাষি নীল কান্তি ও মিটন চাকমা বলেন, তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করছেন। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরিষা চাষে সরকারি প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এ কৃষক বলেন, স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
কোনো ধরনের সরকারি প্রণোদনা ছাড়াই ২০ শতক জমিতে বিলুপ্ত জাতের দেশি মাঘী জাতের সরিষার আবাদ করেছেন পিন্টু চাকমা। তিনি জানান, বিলুপ্ত জাতের হওয়ায় এসব বীজ সংগ্রহ করতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। মাঘী জাতের সরিষা চাষে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করেন এ প্রান্তিক চাষি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষার বড় শত্রম্ন জাব পোকা। সরিষা উৎপাদন করে দেশের সরিষার তৈলের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।
বিগত সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমের কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এবার সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হেক্টর হলেও অর্জিত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
সরিষা উৎপাদনে দেড় থেকে দু'মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। প্রতি একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ১০-১৫ মণ পর্যন্ত সরিষা উৎপাদিত হয়। প্রতি মণ সরিষার ১৫শ'-১৮শ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।