অর্থাভাবে গরুর বদলে নিজেরাই জমিতে হাল দিচ্ছেন নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে অর্থাভাবে গরুর হালের পরিবর্তে নিজেরাই জমিতে মই দিয়ে হাল দিচ্ছেন নেপেন (৪০) ও সুভাসিনি (৩৫) দম্পতি। তাদের আয় বলতে অন্যের জমি বর্গাচাষের পাশাপাশি খালে-বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা। এতে যা মেলে তা দিয়েই মেটাতে হয় সংসারের সাত সদস্যের মৌলিক চাহিদা। তাই এমন সংগ্রামী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এ কাজে পালাক্রমে একজন গরু ও অপরজন চাষির ভূমিকা পালন করেন। সম্প্রতি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পবনাপুর (চরেরহাট) গ্রামে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। সেখানে খোলা প্রান্তরে ইরি-বোরো মৌসুমে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের সাহায্যে জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এখানে ব্যতিক্রম শুধু নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে পানিতে ভিজে জমি সমান করতে শরীরের সবটুকু শক্তি লাগিয়ে হাল দিয়ে চলেছেন তারা। বাঁশের তৈরি মইয়ের দুইপাশে দড়ি বেঁধে দুইহাতে টেনে গরুর ভূমিকা রাখছেন সুবাসিনি। শক্ত হাতে মই চেপে রেখেছেন নেপেন। ফলে কাঁদাজলে ভেজা উঁচু-নিচু জমি সমান হয়ে চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে। জানতে চাইলে এ দম্পতি জানান, তাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। প্রায় একবিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। আজ দশ শতক জমিতে ইরি-বোরো ধানচাষের জন্য মই দিচ্ছেন। এরকম এ জমি থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার অর্ধেক পান জমির মালিক। বাকি ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের জোগান মেটাতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে টাকা দিয়ে গরুর হাল না কিনে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন। তারা আরও বলেন, তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মাধব এসএসসি পাস করেছে। ছোট ছেলে নিখিল, মেয়ে লক্ষ্ণী ও প্রতিমা হাইস্কুলে পড়াশোনা করছে। এ ছাড়া অর্জুন নামে কোলের এক সন্তান রয়েছে তাদের। পবনাপুর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চান মিয়া বলেন, নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি তার প্রতিবেশী। তারা জেলে পরিবারের সদস্য। বেঁচে থাকার তাগিদ ও সন্তানদের শিক্ষিত করতে সংগ্রাম করে চলেছেন তারা। পবনাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি এবং হাল চাষের পর মাটি সমান করতে মই দেওয়া হয়ে থাকে। এ কাজটি গরু দিয়ে করা হলেও নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি আর্থিক সংকটের কারণে নিজেই কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবারটিকে সরকারি সহায়তার দাবিও জানান তিনি। এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, খোঁজ নিয়ে পরিবারটিকে সম্ভাব্য সহযোগিতা করা হবে।