পাহাড়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফুলঝাড়ু!
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ঝাড়ুফুল বা উলুফুল দিয়ে তৈরি ঝাড়ু সারাদেশে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হচ্ছে। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে রাঙামাটির এ ঝাড়ু পাহাড়ের পাশাপাশি এখন সমতলেও সমান জনপ্রিয়।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলা ভৌগোলিকভাবেই উঁচু নিচু ছোটবড় পাহাড়ে ঘেরা। এই পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রাকৃতিকভাবেই উলুফুল জন্মে। এ ফুল শুকিয়ে তৈরি হয় ফুলঝাড়ু। দেশজুড়ে এর চাহিদা বাড়ায় ফুলঝাড়ু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা পাহাড় থেকে উলুফুল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ ফুল কিনে শুকিয়ে রাখেন। তারপর ১৮-২০টি ফুলের কাঠি দিয়ে আঁটি বেঁধে একেকটি ঝাড়ু তৈরি করেন। প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি হয় ৪০-৬০ টাকায়। এখান থেকে এসব ঝাড়ু কিনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সমতলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। একই সঙ্গে এগুলো সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত ঝাড়ু ফুলের জমজমাট বিকিকিনি হয় পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থানীয় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝাড়ুফুল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। আকারভেদে প্রতি আঁটি ঝাড়ু ফুল বিক্রি হচ্ছে দশ থেকে বিশ টাকায়। স্থানীয় এই ঝাড়ু ফুল কিনে নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝাড়ু তৈরি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রির জন্য সরবরাহ করেন।
ঝাড়ুফুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে লংগদু উপজেলার শতাধিক মানুষ। আটারকছড়া, ইয়ারংছড়ি, ডাঙ্গা বাজার, রাজনগরের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এসব ফুলঝাড়ুর কাজ চলছে।
লংগদুতে কয়েক বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন ফুলঝাড়ুর আবাদ করেছিল। সেখানে উৎপাদনও ভালো হয়। তবে ব্যাপকভাবে ফুলঝাড়ুর আবাদ করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অনেকে মনে করেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, 'আমরা তামাক ও জুম চাষের পরিবর্তে ফুলঝাড়ু চাষ করছি। এতে সফলতাও পেয়েছি। তবে সরকারি প্রণোদনা এবং কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের এ চাষাবাদে আরও আগ্রহ বাড়বে ও লাভবান হওয়া যাবে।'
প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যন্ত ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করা যায়। গ্রামের লোকজন ওই সময়েই সারা বছরের জন্য ফুলঝাড়ু কিনে নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফুলঝাড়ু উৎপাদন হয়। একেক জায়গায় একেক জাতের ফুল বেশি উৎপাদন হয়। তবে পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় বিনি জাতের ফুল। গাছের মাথা ও কাটিং দিয়ে এ ফুলঝাড়ুর আবাদ করা হয়। সবচেয়ে সুবিধা হলো ফুলঝাড়ু চাষের জন্য আলাদা জায়গার প্রয়োজন নেই। অন্যান্য গাছের বাগানেও খুব সহজে এগুলো আবাদ করা সম্ভব। আর রোপণের প্রথম বছর থেকেই কাঠি সংগ্রহ করা যায়।
বাজারে প্রতি হাজার ফুলঝাড়ুর কঞ্চির মূল্য সাড়ে ৫০০-৬০০ টাকায় বেচাকেনা হয়। একজন লোক প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ ফুলঝাড়ুর কঞ্চি সংগ্রহ করতে পারে। সেই হিসেবে একজনের প্রতিদিনের আয় দাঁড়ায় ৫০০-৬০০ টাকা। বর্তমানে উপজেলার শতাধিক লোক কোনো না কোনোভাবে এ পেশায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। এতে কম খরচে সফলতার মুখ দেখছেন। কৃষি অফিস থেকে ফুল চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। তবে সরকার এই পাহাড়ি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য ফুলঝাড়ু চাষে বিশেষ উদ্যোগ নিলে চাষিরা আরও সফল হবে।