রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সৈকতে শীতে তরমুজের ফলন

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে সমুদ্র সৈকতের চরে চাষ করা তরমুজ -যাযাদি

একপাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের মেলবন্ধনের মাঝে নজর কাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই সড়কের পাশে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের চরে বালিয়াড়িতে কনকনে শীতে নজর কাড়ছে রসালো ফল তরমুজ চাষ। মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণকারী ও স্থানীয়রা সাগরতীরে তরমুজের বাগানে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে। এক সময়ের গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু রসালো তরমুজ এখন সারা বছর চাষ হচ্ছে কক্সবাজারে। তাও আবার ফরমালিন ও বিষমুক্ত। ওজনে প্রতিটি তরমুজ ৩ থেকে ৬ কেজি হয়। এলাকার মানুষ এখন প্রতি বছর আগাম তরমুজ চাষ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। সমুদ্র সৈকতের চরে কৃষকরা শীতে তরমুজ চাষে সাফল্য দেখিয়ে প্রচুর লাভের মুখ দেখছেন। আগামী ফেব্রম্নয়ারি-মার্চে এসব ক্ষেত থেকে পরিপূর্ণ তরমুজ পুরোদমে বাজারজাত হবে।

শীলখালীর তরমুজ চাষি হামিদুর রহমান (৩৫) বলেন, 'দুই মাস আগে তরমুজ চাষে নেমেছি। আগাম চাষ করে বাড়তি কিছু লাভ করার উদ্দেশ্যে। রবি মৌসুমে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চারা রোপণ করি। প্রতি তিন ফুট দূরত্বে তরমুজের চারা লাগানো হয়। এর পরিচর্যাও তুলনামূলক কম। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৮০-১০০ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রি করা যায়। এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা, এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকায় পাইকারদের কাছে পুরো ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছি। এতে করে বিক্রির ঝামেলাও পোহাতে হয় না।'

দরিয়ানগর এলাকার আবু ছৈয়দ (২৭) জানান, 'এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিদিন ২০-৪০টি মাঝারি বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি করছি। শীত হলেও নতুন ফল হিসেবে পর্যটক ও স্থানীয়রা এই তরমুজ কিনছেন। বড় সাইজের তরমুজ ৩০০-৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের তরমুজ ১৫০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছি। শীত কমে গেলে অবশিষ্ট তরমুজ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করব।'

সরজমিনে জানা গেছে, কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। এ সড়ক ধরে যেতেই এখন দুই পাশে চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ তরমুজের আবাদ। হিমছড়ি, বড়ছড়া, পেঁচারদ্বীপ, দরিয়ানগর এলাকায় উৎপাদিত হচ্ছে এসব তরমুজ। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা, কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ তরমুজ তুলছেন। তবে অসময়ের ফল হওয়ায় দাম একটু চড়া। মেরিন ড্রাইভের পাশ দিয়ে মাইলের পর মাইল যেদিকে চোখ যায় কেবল তরমুজ চাষ। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলনের কোনো বিপর্যয় হয়নি। অথচ একসময় এ জমিগুলো খালি পড়ে থাকত। এখন এ জমিগুলোতেই স্বপ্ন দেখছেন তরমুজ চাষিরা। এ যেন অনাবাদি জমিতে তরমুজ বিপস্নব। অন্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন।

কক্সবাজার শহরে ফল ব্যবসায়ী মনসুর আলী বলেন, প্রতিদিন মেরিন ড্রাইভ এলাকা থেকে ৩০-৪০ পিস তরমুজ কিনে আনেন বিক্রি জন্য। এখন শীত হলেও বিক্রি ভালো। চাহিদা থাকায় লাভ রয়েছে। এক একটি তরমুজ আকারভেদে ২৫০-৪৫০টা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আগাম রসালো ফল হিসেবে ভোজনবিলাসীদের কাছে কদর পাওয়ায় তরমুজ বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে।

ঢাকার পর্যটক হুমায়ুন আযাদ বলেন, 'গাড়ি নিয়ে টেকনাফ দিয়ে আসার সময় দেখি পাটুয়ারটেক এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। তাজা ফল দেখে ৩৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি। সাগর তীরের তরমুজ খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু, পরিবারের সবাই খেয়েছে।'

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার জানান, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজ চাষ বেড়েছে ৩ গুণ। রামু উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৫শ' একর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সৈকত তীরে বেশ কিছু এলাকায় কয়েকশ' একর জমিতে তরমুজের আগাম চাষ হয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ হওয়ায় এবারো বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। নিয়মিত চাষিদের সরেজমিন পরামর্শসহ ক্ষেতের রোগবালাই ও পরিচর্যার খবর নিচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে