বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষে চাষিদের সফলতা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
মেহেরপুরের গাংনীতে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি
বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন মেহেরপুরের গাংনী ও রাঙামাটির মানিকছড়ি উপজেলার কৃষকরা। দাম বেশি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তাই দিন দিন এই বিদেশি সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, খেতে সুস্বাদু আর অল্প খরচে বেশি লাভ ও চাহিদা বেশি হওয়ায় সবজি জাতীয় বিদেশি ফসল স্কোয়াশ চাষে ঝুঁকছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চাষিরা। অনেকেই লাভবান হওয়ায় শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা এটি আবাদে পরামর্শ নিচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছেন এ অঞ্চলে সম্ভাবনাময় নতুন জাতীয় সবজি স্কোয়াশ অনেক কৃষকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। স্কোয়াশ চাষি জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের জিয়াউল হক জানান, এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। বেসরকারি এনজিও সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কাছ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া স্কোয়াশ বীজ, মালচিং পেপার ও পরামর্শ নিয়ে শুরু করেছিলেন স্কোয়াশ চাষ। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যে স্কোয়াশ বিক্রি শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। এক বিঘা জমিতে তিনি অর্ধলাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এখন তিনি অর্ধলাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদী। প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার গাছ থেকে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। এটি চাষে পানির ব্যবহার কমাতে এবং আগাছা ও রোগ বালাই থেকে গাছকে সুরক্ষা দিতে ব্যবহার করেছেন মালচিং পেপার। কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ট্যাপ ও ইয়োলো স্টিট ব্যবহার করছেন তিনি। যাতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। শুধু জিয়াউল হকই নন, তার মতো কাজিপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক স্কোয়াশ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। নতুন নতুন ফসল কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া এবং কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা আয় করা যায় এমন কাজটি করে চলেছেন পলস্নী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) অর্থায়নে পরিচালিত পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি। কৃষকদের সহায়তাকারী বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, স্কোয়াশ চাষসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের নানা প্রশিক্ষণ, বীজ ও বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে উন্নত সবজি আবাদে সহায়তা করে আসছে পিএসকেএস। সংস্থার এ কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে। মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্রথমবারের মতো অধিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করে সফল হয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী ও কৃষি উদ্যোক্তা চিংওয়ামং মারমা মিন্টু। চলতি মৌসুমে ১০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে এই বিদেশি সবজি চাষ করেছেন তিনি। এরই মাধ্যমে এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে এই সবজি। নিয়মিত পরিচর্যায় ফলন এসেছে আশানুরূপ। স্কোয়াশ কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত, যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শশা আকৃতির। এটি শশার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়োর মতো। চাষ পদ্ধতিও মিষ্টি কুমড়োর মতোই। একটি স্কোয়াশ ওজনে ২-৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উচ্চফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এছাড়া এটি সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। এ নিয়ে কৃষক মিন্টু মারমা জানান, 'বেসরকারি সংস্থা 'আইডিএফ'র ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে এ বছর তিনি স্কোয়াশ চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রতিটি গাছেই ফুল-ফলে পরিপূর্ণ হয়েছে। তিনি আরও জানান, স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব। বাজারে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। আইডিএফের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হোসেন বলেন, স্কোয়াশ সবজিতে ভিটামিন সি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা খাদ্য গুণাগুণ রয়েছে। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। ফলনও খুবই ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে স্কোয়াশের বাণিজ্যিক চাষাবাদের বিকাশ হবে। মানিকছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, স্কোয়াশ উচ্চ ফলনশীল জাতের একটি সবজি। এখানকার মাটি স্কোয়াশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মিন্টু মারমার আবাদকৃত এই ফসলের ভালো ফলন এসেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।