রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন

গোলপাতা আহরণে সুন্দরবনের খুলনা অংশে বনজীবীদের যাত্রা শুরু

মো. আতিয়ার রহমান, খুলনা
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গোলপাতা আহরণে সুন্দরবনের খুলনা অংশে বনজীবীদের যাত্রা শুরু

খুলনায় ভরা মৌসুমে জীবনবাজি রেখে পূর্ব সুন্দরবনের এবারের মৌসুমের গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিসম্পন্ন করে পাস-পারমিট নিয়ে বনে যাত্রা শুরু করেছেন বাওয়ালিরা (বনজীবী)। রোববার বেলা ১১টার দিকে ২ ও ৩ নম্বর গোল কূপের বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে পাতা আহরণের যাত্রা শুরু করেন তারা, যা চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এবারের মৌসুমে ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান শেখ জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে এবার ২৮টি নৌকার আবেদন পাওয়া গেছে। অনেক বনজীবী রোববার থেকে গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনের প্রবেশ করেছেন। বাকিরাও ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বনে প্রবেশ করবেন বলে তিনি জানান।

চাঁদপাই রেঞ্জে দু'টি কূপে ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পূর্ব বন বিভাগ। এর মধ্যে শ্যালা গোলপাতা কূপ-(২ নম্বর) ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ও অপরটি চাঁদপাই গোলপাতা কূপ-(৩ নম্বর) ২ হাজার ৮৫০ টন পাতা আহরণ করতে পারবেন বনজীবীরা। বাওয়ালিরা সুন্দরবনে যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা আহরণ করতে পারেন সে জন্য বনবিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তেমনি বন বিভাগের রয়েছে বেশ কিছু শর্তাবলিও। যেমন- গোলপাতা আহরণের সময় বনের অন্য কোনো ধরনের গাছপালা কাটা যাবে না। নৌকার ঝুল হিসেবে বনের অন্য কোনো মূল্যবান কাঠ বা জ্বালানি কাঠ কাটা যাবে না। কোনো বাওয়ালি যদি গোলপাতার পাশাপাশি অন্য প্রজাতির গাছ কাটেন কিংবা বনের ক্ষতি করেন বা গোলপাতা মাইজ পাতা নষ্ট হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান রয়েছে।

এবারের গোলপাতা সংগ্রহকারী ভ্যাট ও অন্যান্য বিষয়াদিসহ প্রতি কুইন্টাল রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে প্রায় ৭১ টাকা। তবে দিন দিন গোলপাতার ব্যবহার কমে আসা ও রাজস্ব বৃদ্ধি হওয়ায় কূপ থেকে গোলপাতা আহরণের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে আসছে। একটি পাসের অনুকূলে প্রতি নৌকায় ৪৫০ থেকে ৫০০ মণ গোলপাতা সংগ্রহ করতে পারবেন বনজীবীরা। এ পাসের সময়সীমা থাকবে ২৬ দিন।

স্থানীয় বাওয়ালি আক্তাকর জানান, এখন ব্যবহার কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে কয়েক হাজার কুইন্টাল গোলপাতা নষ্ট হচ্ছে। যেসব স্থানে গোলপাতার কূপ (প্রজনন ক্ষেত্র) রয়েছে, সেখানে এক জায়গায় অধিক গাছ হওয়ায় মাইজ পাতা নষ্ট হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এছাড়া না কাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার টন গোলপাতা।

চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা বলেন, সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক জায়গার গাছ নষ্ট হলে অন্য জায়গায় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সুন্দরবনের কোনো গাছ মানুষ লাগায়নি। ফলে এ বনের গাছও নিজস্ব নিয়মেই তার বংশ বিস্তারসহ এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে। এক সময় ১০ লাখ টন গোলপাতা আহরণ করা হতো। এখন তা কমে দুই কূপ মিলে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। তাই গোলপাতা সংগ্রহের জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা সরকাই নির্ধারণ করবে। আমরা লোকাল পর্যায় বাস্তবায়ন করব মাত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে