শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

গাংনীতে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাংনীতে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি মেহেরপুরের গাংনীতে জীব বৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দোয়েল কোয়েল ঘুঘু চড়াইসহ নাম না জানা সব পাখি। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়, বন বাদাড় ধ্বংস আর খাদ্য সংকটের কারণে জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সবুজ বনায়ন আর সৌন্দর্যের মাঝে বসবাসে অভ্যস্ত দোয়েল, কোয়েল, ঘুঘু, ময়না আর বুলবুলি। বছর বিশেক আগেও ঘন বনে বাস করা এসব পাখির দেখা মিলত। কোকিলের কুহুতান আর কাঠঠোকরার খটখট শব্দ, সেই সঙ্গে নাম জানা পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখর ছিল গ্রাম বাংলার পরিবেশ। শালিক ফিঙে আর ইস্টিকুটুমের ঝগড়া ছিল নিত্যসঙ্গী। বনে বেড়ে ওঠা গাছের ফলমূল খেয়ে এরা নিরাপদ বংশ বিস্তার করতো। এখন আর নেই সেই চিত্র। অবাধে বিচরণ করতে না পেরে এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বন বাদাড় উজাড় হওয়া ও নতুন নতুন বনায়ন সৃষ্টি না হওয়া ও কীটনাশকের অবাধ প্রয়োগের কারণে এসব জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী জানান, পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব ও নিরাপদ বনাঞ্চল না থাকায় বিলুপ্ত হচ্ছে বানর, হনুমান কাঠ বেড়ালি। ক্ষেত খামারে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খাবারের সন্ধ্যানে আসা পশু পাখির অকাল মৃতু্য হচ্ছে। তাছাড়া প্রজনন ক্ষমতাও হারাচ্ছে। শিকারীরাও অবাধে শিকার করছে এসব পশু পাখি। শিকার বন্ধের দাবি জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা।

ভাটপাড়া ইকো পার্কে বেড়াতে আসা গাংনী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আজমেরী ও রাফসান জানান, পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন পাখির নাম শোনা যায়। অথচ সেগুলো আর চোখে দেখা যায় না। এসব পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করাসহ পাখি শিকার বন্ধের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

পাখিপ্রেমী কাথুলী গ্রামের ফিরোজ আলী জানান, জেলায় যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেখানে কৃত্রিমতায় ভরপুর। জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শও দিয়েছেন পাখি প্রেমীরা। সেই সঙ্গে ক্ষেত খামারে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ বন্ধেরও দাবি জানান তারা।

পাখি বিষারদ মাজেদুল হক মানিক জানান, আগে সব জায়গায় ঘন জঙ্গল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফল গাছ ছিল। সেই সব গাছের ফল খেয়ে তারই শাখায় বাসা বেঁধে থাকতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় এবং দেশি প্রজাতির গাছ না লাগানোর কারণে পাখিরা খাবার সংকট ও বংশ বিস্তার করতে পারছে না। ফলে জীব বৈচিত্র্য বিলুপ্ত হচ্ছে। পাখি রক্ষায় দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণের পরামর্শ দিলেন এই পাখি বিশারদ।

গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা হামিম হায়দার জানান, জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন নতুন বনভূমি সৃষ্টি ছাড়াও বাড়ি বাড়ি ফলজ গাছ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও কোনো বন্যপ্রাণী যাতে কেউ হত্যা বা শিকার না করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বলে জানালেন উপজেলা বন কর্মকর্তা।

বন্যপ্রাণী তথা জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে