শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

একটি গ্রম্নপের জমি দখল আতঙ্কে কাজলা চরবাসী

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
একটি গ্রম্নপের জমি দখল আতঙ্কে কাজলা চরবাসী

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কাজলা চর। এই অঞ্চলের মানুষকে প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে জোর করে জমি দখল করে নিচ্ছে একটি গ্রম্নপ। তাই ওই গ্রম্নপের আতঙ্কে দিন কাটছে কাজলা চরের বাসিন্দাদের।

এলাকাবাসী, থানায় করা মামলা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোলস্নার বিরুদ্ধে রয়েছে শত-শত মানুষের নানামুখী অভিযোগ। শাহজাহান মোলস্নার নেতৃত্বে সোহেল মোলস্না, তারিকুল ইসলাম, সাধু মোলস্না, সিরাজুল, দুলুসহ প্রায় ২০ জনের একটি বাহিনীর কাছে প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও সম্পদ দখলের ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে এই মানুষগুলোকে। 'মোলস্না গ্রম্নপ' নামে তারা এলাকায় পরিচিত। এ গ্রম্নপ চরের মানুষের উপর খবরদারি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের জমি দখল করছে। এছাড়া অতর্কিত হামলা, লুট-তারাজ, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ তাদের নিত্যদিনের কাজ। এসব নানাবিধ ঘটনায় রোষানলে পড়েছে একটি ইউনিয়নের শত-শত পরিবার।

ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম তারা ও কৃষক লীগ সভাপতি আবু খান এসব অভিযোগ করেন যায়যায়দিনের প্রতিবেদকের কাছে। অভিযোগে তারা বলেন, 'আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা এসব মেনে নিতে পারছি না। প্রতিনিয়ত ওই গ্রম্নপের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষগুলোর নানা ধরনের অভিযোগ ও আহাজারি আমরা শুনছি। এসব অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদককে বহুবার জানিয়েছি।'

এ সময় এই দুই নেতা আরও বলেন, 'উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন শিগগিরই এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষগুলোকে মুক্তি দেওয়া। তা না হলে আগামীতে আমাদের দল ও এই এলাকার মানুষগুলো চরম বিপদের মধ্যে পড়বে।'

সরেজমিন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বললে চরঘাগুয়া এলাকার আবু বকর মন্ডল বলেন, 'শাহজাহান মোলস্নাসহ তার ভাই ভাতিজারা আমার ১০ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি এবং মামলা করেছি। তাই প্রতিনিয়ত জীবনের হুমকি নিয়ে এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। গত ২৬ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে ডাকাতি করে ১৮ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে। আসামিরা হলেন- ১। সোহেল রানা, পিতা- চান মিয়া মোলস্না, ২। তারিকুল ইসলাম তাজের, পিতা- বকুল মোলস্না, ৩। সাধু মোলস্না, ৪। সিরাজুল মোলস্না, ৫। তোফাজ্জল হোসেন, সর্ব সাং- চর ঘাগুয়া ৬। জলিল মোলস্না, ৭। ডাবলু মোলস্না, ৮। দুলু মোলস্না, ৯। জহুরুল মোলস্না, ১০। নুরুল ইসলাম মোলস্না, ১১। মাসুদ মোলস্না সর্ব সাং- টেংরাকুরা, থানা সরিয়াকান্দি, জেলা বগুড়াসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জন।'

মো. আতাউর রহমান বলেন, 'আমাদের ২৮ বিঘা জমি দখল করে ফসল ফলাচ্ছে তারা। আমরা কোন বিচার পাচ্ছি না। মামলা করেও কোন ফল হচ্ছে না।' টেংরাকুড়া এলাকার ফরিদ খলিফা বলেন, 'আমার ২৪ বিঘা জমি দখল করেছে শাহজাহান মোলস্নাসহ তার ভাই ভাতিজারা।' তারতাপাড়া এলাকার নুরনবী বলেন আমার ২১ বিঘা জমি দখল করেছে। এ বিষয়ে মামলাও করা হয়েছে। বেড়া পাঁচবাড়িয়া মৌজার জামথৈল গ্রামের খোশবাহার শেখ বলেন, 'আমাদের ৬৫ বিঘা জমি দখল করেছে শাহজাহান মোলস্নারা। এ ঘটনায় আমরা মামলাও করেছি এবং আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এতদিন আমাদের দখলেই ছিল। হঠাৎ আবার তারা এই ৬৫ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা দাবি করে সবগুলো জমি দখলে নিয়েছে। আমরা এসি ল্যান্ড অফিসে অভিযোগ করেছি। সেখানে আলোচনায় বসা হয়েছিল, কিন্তু তারা ওইদিন কোনো কাজগপত্র দেখাতে না পেরে আবারো সময়ের আবেদন করেছে।'

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, ২৬ তারিখ রাতে কাজলা ইউনিয়নের পাকেরদহ এলাকার একটি বাড়িতে অতর্কিতভাবে প্রবেশ ও হামলার যে ঘটনা হয় সেটা সত্য। এ বিষয়ে বাদীপক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছে। আমরা চাই এসব অপরাধকে প্রশ্রয় না দিয়ে দমন করতে।

ওসি আরও বলেন, 'আমাদের থানা থেকে ওই এলাকায় যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন নৌকা। এখানে থেকে যেতে সব মিলে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এমন একটি দুর্গম এলাকায় এ ধরনের অপরাধ একেবারেই মার্জনীয় নয়। ওই বিচ্ছিন্ন এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি হওয়া অতি জরুরি। একটি ফাঁড়ি হলে স্থানীয় মানুষগুলো অনেকটাই ভরসা পাবে।'

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক, কারণ আমাদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। গত ২৫ তারিখ রাতে আমার কাছে ফোন আসে যে একটি বাড়িতে ডাকাতি করা হচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক থানাকে জানাই। পুলিশ ঘটনাস্থলে রওনা দিলেও পানিপথ হওয়ায় সেখানে পৌঁছাতে দেরি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।'

ইউএনও আরও বলেন, 'আমি অভিযোগ পেয়েছি যে, একটি দল অর্থাৎ একটি গোষ্টী কর্তৃক ওই এলাকার অনেকগুলো পরিবার নির্যাতিত। আমরা আশা করি শিগগিরই বিষয়টি আইনের আওতায় নিয়ে অথবা মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।'

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাজাহান মোলস্নার বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে বিভিন্নসময় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু বলেন। 'শাজাহান মোলস্নার বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি সমাধানে আমরা আলোচনাও করছি। একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, 'বিষয়টি আমার কানেও একটু এসেছে। আপনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমিই এটির ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে