কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক একাই ৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম করছেন। এতে চৌদ্দগ্রাম সদরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিলদাতা গ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সপ্তাহের ৫ কর্মদিবসের কোন সময়ে উপজেলা সদর রেজিস্ট্রি অফিস, কোন সময়ে গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং দুইদিন হোমনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সময় দিচ্ছেন তিনি। এতে তিনটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা জনগণ ব্যাপক ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা নিজেদের সুবিধাজনক দিনে দূর-দূরান্ত থেকে এসেও জমি রেজিস্ট্রি না করেই ফিরে যাচ্ছেন। দলিল রেজিস্ট্রি ছাড়াও দলিলের নকল উত্তোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কাজও বন্ধ থাকে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায়। এক কথায় সাব-রেজিস্ট্রারের অবর্তমানে পুরো রেজিস্ট্রি অফিসেই পিনপতন নীরবতা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে যথাসময় দলিল রেজিস্ট্রি না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
৩টি রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে হোমনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রার সাকিম মজুমদার অন্যত্র বদলি হন। এক সপ্তাহের মধ্যেই চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার ওমর ফারুককে প্রতি সপ্তাহের বুধবার এবং বৃহস্পতিবারের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে হোমনা রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার চৌদ্দগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রার আরিফুর রহমান দুই মাসের উচ্চতর প্রশিক্ষণে যান। এর ফলে এখানে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে চৌদ্দগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। দলিল রেজিস্ট্রির ৫ দিনের মধ্যে বুধ-বৃহস্পতিবার হোমনা, রবি-মঙ্গলবার চৌদ্দগ্রাম ও গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সামলাচ্ছেন এই রেজিস্ট্রার।
৩১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য গুনবতী আসেন আবুল কাশেম। কিন্তু রেজিস্ট্রার না থাকায় দলিল না করেই ফিরে যান তিনি। এভাবে বুধ এবং বৃহস্পতিবার দূর-দূরান্ত থেকে বহু লোক চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসে দলিল রেজিস্ট্রি না করেই ফিরে যান।
গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, চৌদ্দগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রার আপাতত গুনবতী অফিসে রোববার-মঙ্গলবার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
হোমনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সপ্তাহে মাত্র দুইদিন এখানে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলছে। এতে জনগণ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন।
চৌদ্দগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার ও গুনবতী, হোমনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বরত ওমর ফারুক জানান, পুরো কুমিলস্না জেলার বহু অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার নেই। তাই জেলার অনেক সাব-রেজিস্ট্রার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই এই সংকট কেটে যাবে।
কুমিলস্না জেলা রেজিস্ট্রার আশ্বাদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে জেলার দেবীদ্বার, চান্দিনা, হোমনায় রেজিস্ট্রার পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার চৌদ্দগ্রামের গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রার উচ্চতর প্রশিক্ষণে ছুটিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চৌদ্দগ্রামের সাব-রেজিস্ট্রার হোমনা ও গুনবতী রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে।