শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ঘন কুয়াশায় আলুক্ষেতে পচন রোগ, ফলন নিয়ে শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় পচন রোগে আক্রান্ত হওয়া আলুক্ষেত -যাযাদি

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চাঁদপুর এবং মেহেরপুরের গাংনীসহ বিভিন্ন স্থানে আলুক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এর ফলে আলুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। কীটনাশক ছিটিয়েও ফল পাচ্ছেন না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নদী তীরবর্তী জেলা চাঁদপুর আলুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে অন্যতম। এর মধ্যে প্রতিবছর কৃষকদের একটি বড় অংশ আলুর আবাদ করে আসছেন। তবে এ বছর আবাদের সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যায়। একই সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ঘনকুয়াশার কারণে আলুর জমিতে ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দিয়েছে। যে কারণে আলুর ফলন কম এবং আলু সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকলেও সবশেষে বাজার মূল্য কম পাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে আলু উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচটি জেলার মধ্যে একটি চাঁদপুর। জেলায় এ বছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১১০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৯০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ কম হয়েছে। এর মধ্যে আবাদ বেশি হয় সদর, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায়।

সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজ গাছতলা গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন মাল জানান, বৃষ্টির কারণে এ বছর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে দেরিতে। এরপর এখন কুয়াশার কারণে আলু গাছের পাতায় রোগ দেখা দিয়েছে। গাছের পাতা সাদা হয়ে ধীরে ধীরে গাছ নুয়ে পড়ে। কীটনাশক ব্যবহার করে অনেকের লাভ হয়নি। সার, বীজ ও কীটনাশক খরচ দিয়ে ভালো দাম না পাওয়া গেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।

সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের চাঁদখার দোকান এলাকার কৃষক রোস্তম আলী বলেন, এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছেন। কিন্তু কুয়াশার কারণে আলুর গাছগুলো বড় হচ্ছে কম। ভালো ফলন নিয়ে এই কৃষক শঙ্কায় রয়েছেন। এরপর দেরিতে আলু উত্তোলন করলে দামও কম পাওয়া যাবে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান রুপম জানান, 'প্রতিবারের মতো এবারও জেলায় ১৩টি হিমাগারে ৮২ হাজার মেট্রিকটন আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি মডেল ঘর আছে, সেগুলো মধ্যে কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতে পারবে।'

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, দুটি ঘূর্ণিঝড় ও অতি বৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে কৃষকরা জমিতে আলু রোপণ করতে পারেননি। তাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এছাড়াও কুয়াশার কারণে আলুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাই কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছি।'

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরে গাংনীতে চলতি মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে আলু খেতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। প্রতিকার হিসেবে ছত্রাকনাশক ও বিষ প্রয়োগ করেও দমন করা যাচ্ছে না। এতে আলুর ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ফলে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কৃষি বিভাগ বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে, তবে বৈরী আবহওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে গাংনী এলাকায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। গেল মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবারও আলু চাষে আগ্রহী হন। সে অনুযায়ী চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশি জাতগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। দেখা গেছে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশি জাতের আলুর ফলন কমে যায়। বীজের মাধ্যমেই এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে।

বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতে দেখা দিয়েছে গাছ পোড়া ও পচন রোগ। এতে গাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। তবে কোন সুফল মিলছে না। বিশেষ করে বামন্দী মটমুড়া বালিয়াঘাট হাড়াভাঙ্গাসহ সীমান্ত অঞ্চলে এ রোগের ভয়াবহতা বেশি।

কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ও ওষুধ স্প্রে করেও কোনো সুফল মিলছে না। আলুর গাছ নির্ধারিত সময়ের আগেই মরে যাচ্ছে। ফলে মাটির নিচে থাকা আলু আকারে ছোট হয়ে থাকছে। আলু গাছ মরে যাওয়ার কারণে আকারে সেই ছোট আলু তুলে ফেলা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গিয়ে চার ভাগের এক ভাগ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে বর্গা চাষিরা। এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু আবাদ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকাও জমছে না।

রামনগর গ্রামের আলু চাষি মুরাদ জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এতে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে আলু ভালো আছে। বাকি তিন বিঘা আলু গাছ পুড়ে গেছে। এসব আলু আর বড় হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আলু তুলে ফেলতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন আলু চাষি সাইফুল ইসলাম।

আলু চাষি আ. আওয়াল জানান, মৌসুমের শুরুতে ৭৫ টাকা কেজি দরে আলুর বীজ কিনে আলু চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগাক্রান্ত আলু ছোট অবস্থায় তুলে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকে।

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, চলতি মৌসুমে ২৩৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। শুরুতে আবহওয়া অনুকূলে থাকায় গাছ খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে তীব্র ঠান্ডা ও কুয়াশায় আলু ক্ষেতে গাছ পোড়া ও পচন রোগ দেখা দেয়। যার ফলে আক্রান্ত আলুর ফলন কমে গেছে। এ আবহাওয়া কেটে গেলে রোগের আক্রমণ কমে যাবে। তাছাড়া চাষিদের বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে