হাওড়াঞ্চলে বাড়ছে ভুট্টার আবাদ কৃষকদের ক্রয় কেন্দ্র দাবি, ভালো ফলনেও ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা

কৃষকদের ক্রয় কেন্দ্র দাবি, ভালো ফলনেও ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মন্তোষ চক্রবর্তী (হাওড়াঞ্চল) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশারগঞ্জ ব্রাহ্মণ-বাড়িয়ার হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড়গুলোতে দিনে দিনে বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা, বাজিতপুর, নিকলী হবিগঞ্জের লাখাই, আজমিরিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই-শালস্না, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগর, সরাইল, আশুগঞ্জসহ পাশের উপজেলাগুলোতে অল্প সময়ে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় ভুট্টার আবাদ প্রতি বছরই বেড়েই চলছে। আর কয়েকদিন পরেই ভুট্টা ঘরে তোলা হবে বলে একাধিক চাষিরা জানান। এবারও ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে জানিয়েছেন হাওড় পাড়ের চাষিরা। একমাত্র বোরো উৎপাদনশীল এই বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চলে কয়েক বছর পরপর অকাল বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে ভুট্টার আবাদে ঝুঁকছেন হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা। দিন দিন এসব হাওড় উপজেলাগুলোতে ভুট্টার চাষাবাদ বাড়লেও ভুট্টার ন্যায্যমূল্য এবং ক্রয় কেন্দ্র চান হাওড়ের কৃষক। জানা গেছে, হাওড় উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এই হাওড় উপজেলাগুলোতে আবাদি জমির সিংহভাগই একমাত্র বোরো ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু মেঘনা, কালনী কুশিয়ারা, ধনু, ধলেশ্বরী, করাতিয়া-কলকলিয়া, ইত্যাদি নদীসহ অসংখ্য নদীর শাখা-প্রশাখা এমনকি হাওড়ের বিভিন্ন খাল-বিল পর্যন্ত ক্রমাগতভাবেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এক-দুই বছর পর পর নদীর তীর ভেঙে হাওড়ের পানি ঢুকে সৃষ্ট অকাল বন্যায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একমাত্র বোরো ফসল উৎপাদন করে লাভবান হতে না পেরে সংসার পরিবার চালাতে গরিব মাঝারি কৃষক প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের অনেকেই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছে। এই অবস্থা লাভজনক ভুট্টা চাষের খবর কৃষকদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ভুট্টার আবাদ বাড়তে থাকে। বর্তমান ধানী জমিতেও ভুট্টার আবাদ বেড়েই চলছে। বিভিন্ন হাওড় ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার হেক্টর ভুট্টার আবাদ হয়েছে। অষ্টগ্রামে আদমপুর ইউনিয়নের চৌদন্ত গ্রামের হরিলাল দাস জানান, এ বছর তিনি ২ একক জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ২৬ হাজার টাকার মতো। ২ একক জমিতে ভুট্টা ফলন হবে ৪৫ থেকে ৫০ মণ। হাওরপাড়ের একাধিক ভুট্টা চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ভুট্টা আবাদের খরচও কম এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এছাড়াও শ্রমজীবী অসংখ্য নারী-পুরুষ ভুট্টার জমিতে বাছাই নিরানি, কাটা মাড়াই ইত্যাদি কাজ করে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারে। তাই হাওড় পাড়ে ভুট্টা আবাদ দিনে দিনে বেড়ে চলছে। সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, সদর, তাহেরপুরসহ জেলার সবকয়টি উপজেলা হাওড়গুলোতে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে ফলন ভালো হবে। কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, কিশোরগঞ্জ জেলাতে এ বছর ভুট্টা আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওড় উপজেলাতে বেশি হয়েছে এবং বেশিরভাগই উচ্চফলনশীল। বর্তমানে ভুট্টা থেকে পোল্ট্রি খাবার, ফিসারির খাদ্য এমন কি ভুট্টার গাছ জ্বালানি কাজেও ব্যবহার করতে পারে। উৎপাদন বেশি হয়, খরচ কম, দাম ভালো হওয়ায় দিন দিন ভুট্টার আবাদ বেড়ে চলেছে।