টেবিলে পেস্নটে থরে থরে সাজানো নানা রঙের আর নানা স্বাদের পিঠা। পাকান, ভাঁপা, পুলি, চিতই, পাটিশাপটা, নকশি পিঠা, ফুল পিঠা, মাল পোয়া, রস পাকনসহ নাম না জানা হরেক রকম পিঠা। এ যেন রসের মেলা। নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পিঠা উৎসব। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
পাবনা ও আটঘরিয়া প্রতিনিধি জানান, সোমবার বিকেলে আয়োজন ছিল পাবনার আটঘরিয়ায় পিঠা উৎসবের। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা। গ্রাম-বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোকজ ঐতিহ্যবাহি খাবার ধরে রাখা ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নবমবারের মতো পাবনায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো পিঠা উৎসব।
আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নবমবারের মতো এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে হ্যাপী টেকনোলোজি পরিবার। এবারের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। পিঠা উৎসব উদ্বোধন করেন আটঘরিয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন। হ্যাপী টেকনোলোজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম, আটঘরিয়া থানার ওসি হাদিউল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংক পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক মিয়া মুহাম্মদ আহসানুল কবির, আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বাসিদ প্রমুখ।
বিভিন্ন নামের পিঠা তৈরি করে নিয়ে উৎসবে অংশ নেন গৃহিণী, শিক্ষার্থী অনেকে। পিঠা উৎসব নিয়ে উচ্ছসিত তারা বলছেন, এতে বাড়ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। উৎসবে বাহারী সব পিঠা দেখে মুগ্ধ হন নানা বয়সী দর্শনার্থীরা। পিঠা উৎসবে বিভিন্ন এলাকা থেকে৬০ জন প্রতিযোগী প্রায় দুইশ' রকমের পিঠা নিয়ে অংশ নেন। পরে তাদের মধ্য থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
হ্যাপী টেকনোলোজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদ বলেন, 'নতুন প্রজন্মের কাছে পিঠার পরিচয় করে দিতে ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই নবমবারের মতো এই পিঠা উৎসবের আয়োজন।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম বলেন, 'পিঠার যে কতরকম নাম থাকতে পারে এখানে এসে সেটি জানতে পারছি। এমন আয়োজনকে আমরা সবসময় উৎসাহিত করে থাকি। আগামী দিনগুলোতে আরও সুন্দর ও বড় পরিসরে করতে পারি সে চেষ্টা ও সহযোগিতা থাকবে।'
পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, 'আমরা অনেককিছুই হারিয়ে ফেলছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা পিঠা খেতে চায় না। তাদের ঝোঁক চাইনিজ খাবারের দিকে। এমন সময়ে এই পিঠা উৎসব আয়োজন নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির এক অপরূপ সৌন্দর্যের জনপদ লংগদু। ঋতু ভেদে এই অঞ্চলে ধরা দেয় প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ। জমকালো আয়োজনে এই পাহাড়ি গায়ে এবার অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব। যা নজর কেড়েছে সকলের।
গত শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার মাইনীমূখ ইউনিয়নের হাজাছড়া এলাকায় শীতকালীন ঐতিহ্যের দৃষ্টিনন্দন এ পিঠা উৎস আয়োজিত হয়। যেখানে স্থানীয় তরুণ-তরুণীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি মজাদার সব পিঠার সমারোহ দেখা গেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, সবুজ প্রকৃতির মাঝে অনেকগুলো স্টল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে স্থান পেয়েছে বাহারি সব পিঠা। কেউবা পিঠা কিনছেন, কেউবা গরম গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে অবলোকন করছেন সৌন্দর্য। মায়েরা সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন হরেক রকমের পিঠার সাথে। আবার কেউ কেউ ছবি তুলে জমাচ্ছেন স্মৃতি।
আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যের এই পিঠা উৎসব এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আর গ্রামে গঞ্জে আগের মত পিঠা তৈরি হয় না। তাই আমি চাই পিঠার কারিগর এবং পিঠার বাহারি স্বাদ সবাই উপভোগ করুক।
এদিকে বিচারকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার, মাইনীমূখ ন্যাশনাল হাসপাতালের চিকিৎসক আল মামুন ও সাংবাদিক আরমান খান সাধারণ মানুষ ও কারিগরদের উৎসাহিত করতে পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণকারী ৩টি দোকানকে যাচাই বাছাই করে জুলেখা ফুড পয়েন্টকে প্রথম, জসিম পিঠা হাউজকে দ্বিতীয় ও ফারুক পিঠা হাউজকে তৃতীয় স্থান নির্বাচিত করে পুরস্কার প্রদান করেন।