বিলীনের পথে 'ফসলী জমি'
ফসলি জমি, নদ-নদী ও খাল বিলের মাটি যাচ্ছে ভাটায়
দেদার কাটা হচ্ছে ফসলি জমি, নদ-নদী ও খাল-বিলের পাড়ের মাটি। এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এর ফলে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। ভবিষ্যতে খাদ্য খাটতিতে পড়তে পারে দেশ। সুধীমহল দ্রম্নত এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় কৃষি জমির উপরের অংশ উর্বর মাটি বা টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা। উর্বর মাটি ইটভাটায় চলে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন কমছে। শুধু তাই নয়, ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ। মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পাশাপাশি চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এছাড়া মাটি পরিবহণকারী ট্রলি ও ট্রাকগুলো যেনতেনভাবে মাটি ভর্তি করে মহাসড়ক ও গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তায় চলাচল করছে। এতে রাস্তায় মাটি পড়ে পাকা রাস্তার বিটুমিন নষ্ট ও কাঁচা রাস্তা ধসে গিয়ে জনপথের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পথচারী ও যাত্রী সাধারণ।
জানা গেছে, উপজেলার ২২টি ইটভাটার মধ্যে ২টি ব্যাতীত বাকিগুলোর পরিবেশগত কোনো ছাড়পত্র নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিশেষ করে লোকালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা ও ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গ্যাস ও ধুলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের চির চেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ। এছাড়া সরকারি আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি ইট ভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কাই করছে না ইটভাটার মালিকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, মশুলস্নী, সিংরইল, রাজগাতী, গাংগাইল, আচারগাঁও, জাহাঙ্গীরপুর ও নান্দাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমির মাটির ৩ ফুট উপরি অংশ ভাটায় চলে যাচ্ছে। ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। ভাটার দালালরা মূলত কৃষকদের বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে জমির মাটি স্বল্প মূল্যে কিনে ভাটায় বিক্রি করছে। এতে লাভবান হচ্ছে ইটভাটার মালিকসহ একটি দালাল চক্র। তবে লোভে পরে কৃষকদের ক্ষতিসহ নষ্ট হচ্ছে ভূমির পরিবেশ ও রাস্তাঘাট। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলো।
নান্দাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার বলেন, প্রশাসন বিষয়টি জানে। আর ভাটার ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিছুজ্জমান বলেন, উর্বর মাটি তৈরি হতে অনেক বছর সময় লাগে। একটি উদ্ভিদের ১৬ প্রকার খাদ্যের মধ্যে মাটিতে ১৩ প্রকার খাদ্য উপাদান রয়েছে। ফসলি জমির উপরি ভাগের ৪-৬ ইঞ্চি
\হমাটি বেশি উর্বর। তবে এভাবে উর্বর মাটি ভাটায় চলে গেলে ভবিষ্যতে ২০-৩০ শতাংশ হারে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জরিমানা আদায় করার পরেও তা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, ইতোমধ্যে ভাটায় মাটি নেওয়ায় রাস্তা নষ্ট করায় ৬টি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়েছে এবং একটি ইটভাটা লাইসেন্স না থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো দেখছি।
ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ পরিদর্শক মাহাবুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটা প্রতিরোধে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। অভিযোগ দিলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জালাকান্দী-লক্ষ্ণীবরদীর একটি বিল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। ফলে আশপাশের কয়েকশ' বিঘা ফসলি জমি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কোনো কৃষক প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তা ছাড়া পাশের মুরাদপুর এলাকার আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি একটি ফসলি এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জালাকান্দী-লক্ষ্ণীবরদীর একটি বিল থেকে গত দুই মাস ধরে দুইটি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার বালু মুরাদপুর, লক্ষ্ণীবরদী, উত্তর কলাগাছিয়া ও এর আশপাশের এলাকায় বিক্রি করছেন ওই ব্যক্তি। ফলে আশপাশের কিছু ফসলি জমি ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাকি জমিগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানে কোনো প্রকার বালুমহাল না থাকলেও বিলের ফসলি জমি কেটে এক ধরনের জলাশয়ের মতো তৈরি করে ফেলা হয়েছে। এখান থেকে আরও বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আশপাশের অনেক ফসলি জমি ভেঙে জলাশয়ে পড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহাম্মেদ জানান, এখানে কোনো বালুমহাল নেই। ফসলি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার ব্যাপারে কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমন কি বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগতও নই। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।