ম স্বদেশ ডেস্ক
কুমিলস্না ও নোয়াখালীতে দুইপক্ষের সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হয়েছে। এছাড়াও আত্মহত্যা, বিদু্যৎস্পৃষ্টসহ নানা ঘটনায় পাঁচ জেলায় আরও পাঁচজনের অপমৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। খুলনা, নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্না, বগুড়ার ধুনট, ময়মনসিংহের ভাঙ্গুড়া ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে এসব মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
খুলনা অফিস জানান, খুলনায় চারতলা ভবনের চিলে কোঠা থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের মির্জাপুর ইউসুপ-রো রোডের ২৩ নং বাড়ির চারতলার চিলেকোঠা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ভবন মালিক খালিদ খান বলেন, মিথুন চার বছর ধরে তার ভবনের চিলে কোঠার ঘরে একাই বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি রামপাল। সোমবার তার ঘরের দরজা চাপানো ছিল, এসে ডাকলে বের হননি। পরে মঙ্গলবার সকালে পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া সংবাদ দিলে এসে দেখেন ঘরের মধ্যে তার মরদেহ ঝুলছিল। বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না জানান, কুমিলস্নার মেঘনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে কামরুল নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭ জন। জেলার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চালিভাঙ্গা নলচর গ্রামে সোমবার সন্ধ্যায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুল চালিভাঙ্গা গ্রামের আবদুর রবের ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের হুমায়ুন চেয়ারম্যানের ভাইয়ের হত্যাকান্ডের জের ধরে সোমবার সন্ধ্যায় হুমায়ুন চেয়ারম্যান গ্রম্নপ ও কুমিলস্না জেলা পরিষদের সদস্য কাইয়ুম গ্রম্নপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কাইয়ুম গ্রম্নপের কামরুল মারা যান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রাত সাড়ে ৭টায় কুমিলস্নার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান জানান, 'দুইপক্ষের সংঘর্ষে কামরুলের মৃতু্য হয়েছে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করছে।'
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, নোয়াখালীর সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের দুইপক্ষের সংঘর্ষে এক তরুণ নিহত হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে নোয়ান্নই ইউনিয়নের বাঁধেরহাট পূর্ব বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ হোসেন সাজ্জাদ (২০) নোয়ান্নই ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজের ছেলে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়।
একই সময়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আরও চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- নাজিম উদ্দিন (১৮), মো. রাকিব (২৫), মো. রিয়াদ হোসেন (২২) ও মো. রাজীব হোসেন (২৪)। তারা সবাই একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। আহতদের প্রথমে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নোয়ান্নই ইউনিয়নের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিফাত ও রিয়াদ নামে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। দুপুরে দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাজ্জাদসহ আহত হয় পাঁচজন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন দুই সহোদর রাকিব উদ্দিন (২৫), রিয়াজ উদ্দিন (২৩) ও আরিফ উদ্দিন (২৫)। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্নায় একটি ভাঙারি দোকানে জামাল (১৪) নামে এক কিশোরের রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় হৃদয়, জাহাঙ্গীর, কালেকখা ও জুয়েল নামে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে ফতুলস্নার চাষাঢ়া রেলস্টেশন সংলগ্ন আল আমিনের ভাঙারি দোকানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাত ১২টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শী তানজিল বলেন, জামাল তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভাঙারি টোকায়। সেই টোকানো মাল আল আমিনের দোকানে বিক্রি করি। রাত ১০টায় জুয়েল, হৃদয়, জাহাঙ্গীর, কালেকখা, খোকন ও জামাল একসঙ্গে আল আমিনের ভাঙারি দোকানে বসে জুতার আঁঠা পলিথিন ব্যাগে ভরে ডান্ডি নেশা তৈরি করে সেবন করে। এরপর সবাই দোকানেই ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১১টায় তানজিল দোকানে গিয়ে দেখে জামাল দোকানের বাঁশের আঁড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে।
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার ধুনটে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে রহিম বক্স (৬৫) নামে এক টিউবওয়েল মিস্ত্রির মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর খাদুলী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত রহিম বক্স ওই ইউনিয়নের চরখাদুলী গ্রামের মৃত মোলা বক্স ছেলে। এছাড়া আহত জেল হোসেন (২৬) গোপালপুর খাদুলী গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রতিবেশী আবু বক্কর জানান, রহিম বক্স শনিবার সকালে নুরুল ইসলামের বাড়িতে টিউবওয়েল মেরামতের কাজ করছিলেন। তাকে সহযোগিতা করছিলেন নুরুল ইসলামের ছেলে জেল হোসেন। তারা লোহার রড দিয়ে টিউবওয়েলের পাইপ বের করছিলেন। এমন সময় অসাবধানতাবসত লোহার রডটি বৈদু্যতিক তারের সঙ্গে স্পর্শ লাগতেই তারা দুজনই বিদু্যৎস্পৃষ্ট হন। এর কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলেই টিউবওয়েল মিস্ত্রি রহিম বক্সের মৃতু্য হয়।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়ায় স্বামীর গৃহের শয়নঘর থেকে সুমাইয়া আক্তার সুমি (২৩) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের বড় বিশাকোল বাঁধপাড়া গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া থানা-পুলিশ। নিহত সুমি ওই গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী জাকিরুল ইসলামের স্ত্রী ও পাশের উলস্নাপাড়া উপজেলার মানিকদহ গ্রামের বিশু প্রামাণিকের মেয়ে। পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে ওই গৃহবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের নিলখী গ্রামের ইসাক মিয়ার ছেলে ওয়াসিম মিয়ার (৪৫) লাশ গত সোমবার পাশের খালের পানির মধ্যে থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে ওয়াসিমকে কে মেরেছে এলাকাবাসীর মধ্যে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে অপমৃতু্য মামলা রুজু হওয়ার পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।