কুল চাষ করে কপাল খুলছে চরের চাষিদের। সিরাজগঞ্জের চৌহালীর বাজারে এখন প্রায় সারা বছরই দেখা মেলে কুল বা বরই। দেশি ফল হিসেবে বরইয়ের চাহিদা সব সময়ই থাকে।
এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত আপেল কুল, বাউকুলসহ কয়েকটি জাতের কুল চাষ করছেন কৃষক। মাত্র চার মাসের ফসল। বছরে ফলন পাওয়া যায় তিনবার। এতেই কৃষকের ঘরে ঢোকে লাখ লাখ টাকা। বিশেষ করে লাভ বেশি হওয়ায় চরের কৃষকরা এখন কুল চাষে ঝুঁকেছেন। তাই বছর বছর বাগান বাড়ছেই। কুলেই জীবন বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আগে সেখানে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। মৌসুমি ফসল ছাড়া সে অর্থে সেখানে কোনো চাষাবাদই হতো না। সেই চরাঞ্চলেই এখন কুল চাষ করে বিপস্নব ঘটিয়েছেন কৃষক। রোদের তীব্রতা ও বালুর কারণে অন্যসব ফসব উৎপাদনে ব্যর্থ হলেও কুল চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। চরাঞ্চলে এখন পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ ও শাকসবজির পাশাপাশি আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করা হচ্ছে। শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি কুল বা বরই। বাজারে টক-মিষ্টি গোল বরই ও নারকেল কুলের পাশে আপেল কুল এবং বাউকুল আছে স্বাদ মেটাতে। দাম হাতের নাগালেই।
চৌহালী উপজেলায় যমুনা চরাঞ্চলের স্থল ইউনিয়ন। প্রায় ২ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমি এর অন্তর্ভুক্ত। তবে দাবদাহে অন্যসব ফসল উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয় চরাঞ্চলের কৃষকদের। সেই রুক্ষ চরেই কুল চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। তাই কুল চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পরিত্যক্ত জমিতে কুল চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় যতই দিন যাচ্ছে কুলের আবাদ ততই বাড়ছে।
যমুনার এই চরে কুল চাষ করে বর্তমানে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন নাটোরের মোস্তফা দম্পতি। কুলচাষি মোস্তফা জানান, যমুনা চরের ২০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গড়ে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ মণ করে ফলন হবে বলে আশা করছেন। বর্তমানে বাজারে পাইকারি দুই হাজার টাকা মণ দরে বাউকুল বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫০ টাকা কেজি পড়ছে। তবে খুচরা বাজারে কুল বরই ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪শ টাকা থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা দরে।
চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাজেদুর রহমান বলেন, সাধারণত চরাঞ্চল এ ধরনের কুল চাষের জন্য উপযোগী। তাই যমুনা চরেই কুল চাষ বেশি চাষ হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবকরা চরাঞ্চলে কুল চাষে ঝুঁকেছেন। এতে কুল চাষে নীরব বিপস্নব ঘটে গেছে। প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের চাষবাসের জন্য ঋণ ছাড়া সব ধরনের সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। অল্প চাষে বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আগামীতে আর নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।