হোসেনপুরে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা খাল
প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ভয়াবহ নাব্য সংকটে স্রোতহীন মরা খালে পরিণত হয়েছে এককালের প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদ। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সেচসহ জীববৈচিত্র্য। স্থানীয়রা মনে করেন সঠিক পন্থায় গত কয়েক বছর আগে এ নদটি খনন করা হলেও তা জনসাধারণের কোনো কাজেই আসেনি।
সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের ওপর নির্মিত খুরশিদ মহল সেতু সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, ভয়াবহ নাব্য সংকটের কারণে নদের স্বাভাবিক অস্তিত্ব হারিয়ে খুরশিদ মহল সেতুর পাটাতন ভেসে উঠেছে। বইছে খালের মতো স্রোতহীন পানির প্রবাহ। এ সময় স্থানীয়রা জানান, গত অর্ধশত বছরের বেশি সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে দিন দিন এর নাব্য হ্রাস পেয়েছে। পরিণত হয়েছে গতিহীন মরা খালে। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ এলাকার জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্যসম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। এর নেতিবাচক প্রভাবে হাজারো জেলে পরিবার এ পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলো এখন বিত্তবানদের ফসলি জমি।
এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. খাইরুল ঢালী, মো. আব্দুল ওয়াদুদ ও শিক্ষক মো. খোকন মিয়াসহ অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, এক সময়ের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদ আজ স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচনির্ভর অনেক কৃষকের পড়তে হচ্ছে সেচ সংকটে। তাই ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ের মানুষের দাবি পুনরায় নদটি যথাযথ ও টেকসই পদ্ধতিতে দ্রম্নত ড্রেজিং করে এর পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
জানা যায়, গত কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদটি খননের পরেও বর্তমানে পানির প্রবাহ না থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে চাষাবাদ। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের লোকজন সিন্ডিকেট তৈরি করে কোটি টাকার বালু ও মাটির বাণিজ্য করে রাতারাতি ধনী বনে যাচ্ছেন। ফলে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে সঠিক অঙ্কের রাজস্ব, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার ছোট-বড় ব্রিজ ও কালভার্ট। সাধারণত শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে গেলে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখলে নিতে প্রতি মৌসুমেই একাধিক গ্রম্নপের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষ ও দাঙ্গা হাঙ্গামায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের খাস জমি ও বালু ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে নদী পারের মানুষের মধ্যে সামাজিক অসন্তোষ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
খুরশিদ মহল গ্রামের রিফেল মিয়া, সাহেবের চর এলাকার বাবুল মিয়াসহ অনেকেই জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন রোধে কোনো কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ নদের গহীনে হারিয়ে যাচ্ছে হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চরসহ নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের আরো অনেক গ্রাম। অন্যদিকে আবার নাব্য সংকটের কারণে শুকনো মৌসুমে ছোট ছোট নৌকা চলতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসীরা। তাই ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি যে কোনোভাবেই হোক ব্রহ্মপুত্রের নাব্য আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হোক। এতে বাঁচবে কৃষক, চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি।