ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি বছর গত বছরের চেয়ে ১৩৭ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ হলেও সরিষার চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন চাষিরা।
চলতি বছর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমি। গত বছর সরিষার চাষ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমি।
ইতোমধ্যে চাষকৃত অধিকাংশ সরিষার জমিতে ফুল ফুটেছে। বীজও আসতে শুরু করেছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলে ফুলে মধু আহরণের জন্য ভিড় করছে মৌমাছি। তবে অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমি। গত বছর সরিষার চাষ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমি। চলতি বছর ১৩৭ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ২৮৫ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ৪ হাজার ৫০ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ১ হাজার ৯২ হেক্টর, নাসিরনগর উপজেলায় ৬ হাজার ৫০ হেক্টর, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১২০ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, বিজয়নগর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ২৩৫ হেক্টর এবং আখাউড়া উপজেলায় ৪৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়।
চলতি মৌসুমে কৃষকরা তাদের জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, টরি-৭ জাতের সরিষার চাষ করেছে।
অন্যান্য ফসলের চেয়ে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিন সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা, সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর, মাছিহাতা ইউনিয়নের গাজারিয়া এবং নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা ও নাসিরনগর উপজেলার ভুবণ গ্রামের বিভিন্ন জমি ঘুরে দেখা যায় হলুদের সমারোহ। দিগন্তজুড়ে ফসলি মাঠে হলুদ ফুলে শোভিত। বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল। জমিতে মৌমাছির গুঞ্জন। সরিষা ফুলের হাসিতে হাসছে মাঠ।
প্রতিদিন সকাল ও বিকালে জেলা সদরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন এই সরিষা ফুল দেখতে। অনেকেই জমিতে প্রবেশ করে শখ করে ছবি তোলেন।
জানা গেছে, বারি-১৪, ১৭, ১৮ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের পর ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উত্তোলন করে ফের একই জমিতে বোরো আবাদ করা যায়। সরিষা গাছের পাতা মাটিতে পড়ে জৈবসারে পরিণত হয়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। সরিষা চাষে উৎপাদন ব্যয়ও কম। সরিষা চাষের পর একই জমিতে ধান চাষ করলে সারও কম দিতে হয়। তাই এখানকার কৃষকরা দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর গ্রামের কৃষক রজব মিয়া জানান, তিনি গত ৫ বছর ধরে তার ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে আসছেন। চলতি বছর তিনি তার জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করছেন। সরিষার চাষ করতে তার বিঘাপ্রতি ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে সরিষার গাছগুলো বেশ সুন্দর হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করি এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নে বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শাহআলম বলেন, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছেন। এ বছর গ্রামের অনেকেই সরিষার চাষ করেছে। সরিষার চাষের পর একই জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় তাই কৃষকরা দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মুন্সী তোফায়েল আহমেদ জানান, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমি। চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমি। তবে তা গত মৌসুমের চেয়ে ১৩৭ হেক্টর জমিতে বেশি।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করে আসছি। আশা করছি এ বছর জেলায় সরিষার ভালো ফলন হবে।