শৈত্যপ্রবাহ, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে আলুক্ষেত ও বোরো বীজতলায় মড়ক দেখা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে আলুক্ষেতে বাড়ছে লেট ব্রাইট রোগ। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষক। সেই সঙ্গে লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কীটনাশক দিয়ে এসব রোগ নির্মূল করা যাচ্ছে না। তাই হতাশা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার তিতাসে গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও শীতের সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বেশ কিছু এলাকায় আলুক্ষেতে লেইট বস্নাইট রোগ বা নাবি ধসা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে আলুর পাতায় কালো ফোসকা পড়ে মরে যাচ্ছে গাছ। বুধবার রাতভর হালকা বৃষ্টি হওয়ায় আলুর ফলন নিয়ে কৃষক শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গত বছর বিঘাপ্রতি আলু আবাদে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় বিঘাপ্রতি অন্তর ১০ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে শীতের কারণে গাছে লেইট বস্নাইট রোগ ধরেছে। বালাইনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৭টি বস্নকে ১১৬ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এবারের আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২০ হেক্টর। পুরনো ডায়মন্ট ও মুল্টা জাতের সঙ্গে এবার অনেক চাষি বারি আলু-৯০ জাতের আলুচাষ করেছেন।
উপজেলার কালাইগোন্দিপুর বস্নকের কৃষক আবু তাহের মিয়া বলেন, 'আমি এক বিঘা জমিতে ডায়মন্ট জাতের আলু চাষ করেছি। ঘন কুয়াশা ও শীতে নাবি ধসা রোগের আক্রমণ দেখা দিলে আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। তেমন কাজ হচ্ছে না। এরই মধ্যে হালকা বৃষ্টি পেয়েছে। বাকিটা আলস্নাহপাক জানেন।'
একই বস্নকের কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, 'আমি প্রতিবছর কমবেশি আলু চাষ করি। আগে ডায়মন্ট জাতের আলু চাষ করতাম। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে বারি আলু-৯০ জাত এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশপাশের অনেক ক্ষেত কালো ফোসকা ও পাতা পচা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমার জমিতে যাতে এর প্রভাব না পড়ে, তাই ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি।
কালাইগোবিন্দপুর বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কাউছার আহমেদ জানান, ঘন কুয়াশায় আলুতে ছত্রাকের আক্রমণে আলুর লেইট বস্নাইট রোগ দেখা যায়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষকদের আধুনিক জাতের আলুর আবাদ করতে ও সঠিক বালাইনাশক সঠিক সময় প্রয়োগ করতে পরামর্শ দিচ্ছি। তবে অন্যান্য এলাকার চেয়ে তিতাসে এই রোগের প্রভাব অনেকটা কম।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফ আব্দুলস্নাহ মোস্তাফিন বলেন, ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী। কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এই ফসলের জন্য ক্ষতিকর। শিশির বা ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও নিয়মিত স্প্রে করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর বদলগাছীতে শীতজনিত কারণে বোরো ধানের বীজতলায় মড়ক দেখা দেওয়ায় কৃষকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েপ্রণ। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজ হলুদ বর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। যার কারণে সময়মতো বীজ রোপণ করতে না পারলে ধানের ফলন ভালো না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে ভাতশাইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আক্কেস আলী, জিলস্নুর রহমান ও রমজান আলী, মিঠাপুর গ্রামের মনোরঞ্জন, বেলাল হোসেন, পলাশ চন্দ্র বিলাশবাড়ির আ. রাজ্জাক, ফারুক হোসেন, জিয়াউর কোলার একরামুল হক, রুস্তম আলী, শাহীন হোসেনসহ অনেক কৃষক বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর কুয়াশা ও শীতের প্রকট তীব্রতা বেশি হওয়ায় ধানের বীজ হলুদ বর্ণ হচ্ছে। সময়মতো আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে কিনা, এই আশঙ্কায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, ঘন কুয়াশা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজ হলুদ বর্ণ হয়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু চারা নষ্ট হবে না। আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ বছর ইরি-বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর। এ পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে ১২৫ হেক্টের।