রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত

সরিষায় নতুন স্বপ্ন দেখছেন শিবচর ও চকরিয়ার চাষিরা

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মাদারীপুরের শিবচরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষার ফুল -যাযাদি

সারাদেশের মতো এবার মাদারীপুরের শিবচর ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে সরিষার। বাম্পার ফলনে কৃষি অফিস ও কৃষকের লক্ষ্যমাত্রা পূূরণ হয়েছে। তাই আবাদ করা সরিষা নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ দুই উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাদারীপুরের শিবচরে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষার ফুলে ছেয়ে গেছে। চির সবুজের বুকে যেন কাঁচা হলুদের আল্পনা। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে এখন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের মুখে হাসি। কৃষকরা ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে বারি উদ্ভাবিত উফশীজাতের সরিষা বীজ মাঠে বুনছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং সরিষার ভালো মূল্য পেলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে ও ভালো দাম পেলে অনেকে লাভবান হবেন বলে কৃষকের।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চারপাশে সরিষা ফুলের ম-ম গন্ধে এখন মুখরিত ফসলের মাঠ। রং-বেরঙের প্রজাপতি আর মৌমাছির গুনগুন শব্দ আকৃষ্ট করছে সবাইকে। কাদিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরিষার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শিবচরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই সরিষার চাষ। সরিষা চাষ করে ঘুরেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর। সরিষা চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে। যা গত তিন বছরের মধ্যে এবার আবাদ অনেক বেশি হয়েছে।

উপজেলার চরজানাজাত এলাকার এসকান্দার মাতবর বলেন, ৩ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৮ থেকে ৯ মণ করে সরিষা পাবেন বলো আশা তার।

মোজাম্মেল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। এবার এক বিঘা মাটিতে সরিষা লাগিয়েছেন। শুধু তাদের না, আশপাশের সবার ফলন এবার ভালো হয়েছে। তবে যদি একটু দাম পান, এবার তাহলে ভালো লাভ হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, জমিতে সরিষা চাষ করলে সরিষার ফুল ও সরিষা ঝরে পড়ে মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। যা পরে বোরো আবাদে অধিক ফলন পেতে সার হিসেবে কাজ করে। চলতি বছরে উপজেলায় ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার ভালো ফলন হবে।

ইউএনও আবদুলস্নাহ আল-মামুন বলেন, বর্তমানে সরকার কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার ব্যাপক চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। মৌমাছিদের গুনগুন শব্দে এখন মুখরিত সরিষা ক্ষেতের মাঠগুলো। এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার অন্তত প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কৃষক।

অন্যদিকে উপজেলার দিগন্তজুড়ে ফুটিয়ে তোলা সরিষা ক্ষেত এখন সর্বসাধারণের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে রবি ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় ৫০০ হেক্টর (১২৫০ একর) জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাহারবিল ইউনিয়নে ১৫০ হেক্টর, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে একশত হেক্টর, বদরখালী ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর, চিরিঙ্গা ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর ও চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ এখন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এ বছর প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চকরিয়া সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার কৃষক আহমদ উলস্নাহ বলেন, এবার ৪০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এ ছাড়া চিরিঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক ফজল কাদের, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষক কামাল উদ্দিন, নাজেম উদ্দিন ও চকরিয়া পৌরসভার আমানচর এলাকার কৃষক আবদুল খালেক, আবুল হোসেন বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ কম। জমিতে বেশি পরিশ্রম করা লাগে না। কম সময়ের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। তাতে লাভও হয় বেশি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন বলেন, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম ও দাম ভালো পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চলতি মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সরিষা চাষে বাড়তি জমির প্রয়োজন হয় না। দুই মাসের মধ্যে সরিষা তুলে একই জমিতে আবার বোরো চাষ শুরু করেন কৃষকরা। সরিষা চাষে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি পরিবারের জন্য সরিষা তেলের ঘাটতি পূরণেও সফল হচ্ছেন কৃষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে