শান্তিগঞ্জে হাওড়ে পানির অভাবে হাজার বিঘা জমি অনাবাদির শঙ্কা
প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে হাওড়ের উঁচু জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেচ পাম্প বসাতে না পারায় পানির অভাবে আটকে আছে হাজার বিঘা জমির চাষাবাদ। শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর খালে পাম্প বসাতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএডিসি) বাধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কর্তৃপক্ষ বলছে, পাম্প বসালে সেতুর ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
পাম্প বসানোর জটিলতায় সদরপুর, পাগলা পশ্চিমপাড়া, নিদনপুর, আস্তমা, ডুংরিয়া, তেঘরিয়া, কামরুপদলং, তালুকগাঁও, পার্বতীপুর, সুলতানপুরসহ ১০ গ্রামের মানুষের উর্বর জমিতে ধান চাষের পরিবর্তে গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। কৃষকরা জানান, রোপা আমন ধান কাটার পর প্রায় হাজার বিঘা বোরো ধান সদরপুর খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ হয়। বিএডিসির সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে সদরপুর সেতুর দক্ষিণ পাশে পাম্প বসিয়ে ২০০৮ সাল থেকে পানি তোলা হয়। তবে চলতি বোরো মৌসুমে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধার কারণে সেচ প্রকল্পের পাম্প বসাতে পারছে না বিএডিসি।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেছেন, 'সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ৪৮ কিলোমিটার সড়কের ওপর সদরপুর সেতুর গোড়ায় সেচ পাম্প বসিয়ে পানি তোলার কারণে সেতুর গোড়ায় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সে কারণে সেতুর গোড়া থেকে ৫০০ ফুট দূরে পাম্প বসাতে বলা হয়েছে।'
তবে বিএডিসির সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার আব্দুল ওয়াকিব বলেছেন, 'অনেক দূরে পাম্প বসাতে বলা হচ্ছে। দূরে পাম্প বসিয়ে ড্রেনে পানি আনতে হলে ২৫-২৬ লাখ টাকা খরচ হবে। আমাদের এত টাকা নেই। বিষয়টি অনেক আগেই (সাবেক) পরিকল্পনামন্ত্রী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি অফিসার ও বিএডিসির ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছি। ধান লাগানোর সময় চলে যাচ্ছে, কিন্তু পাম্প বসাতে না পারার কারণে কৃষকরা বিপদে পড়েছেন। '
কৃষকরা জানান, পানির অভাবে আটকে আছে জমি চাষাবাদ। হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন শত শত কৃষক। সময়মতো চারা রোপণ করতে না পারলে বীজতলায় নষ্ট হবে ধানের চারা। যে জমিতে ধানের চারা রোপণ করার কথা, সেখানে গরু-ছাগল চড়ছে।
সদরপুর গ্রামের মতিউর রহমান ও মিন্টু বিশ্বাসের কাজই জমি চাষাবাদ। তারা বলেন, 'সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, যেভাবেই হোক পাম্প বসিয়ে পানি ব্যবস্থা করা হোক। না হলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।'
বিএডিসির সুনামগঞ্জ জোনের সহকারী প্রকৌশলী কাজী হোসেন আর রাফী বলেন, সেতুর কাছে সেচ পাম্প বসানোর কারণে সদরপুর সেতুর ক্ষতি হচ্ছে। তাই ৫০০ মিটার দূরে পাম্প সরানোর জন্য বলেছেন। এতে বেশ টাকা ব্যয় হবে। এত টাকা কৃষকদের নেই। কৃষকদের বলেছেন কোনোভাবে পাইপ বসিয়ে কাজ চালানোর জন্য। আগামী বছর প্রকল্প এলে পাইপ লাইন করে দেবেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'পাম্প বসাতে সওজ কর্তৃপক্ষের বাধার বিষয়টি জানার পর আমরা বিএডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিএডিসির সঙ্গে সমন্বয় করছি এবং যত দ্রম্নত সম্ভব কৃষকদের পানি সরবরাহের অনুরোধ করছি।'
শান্তিগঞ্জ ইউএনও সুকান্ত সাহা বলেন, সেতুর ক্ষতির বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কৃষকদের জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। এই সমস্যার বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষ এ বছর সেতু থেকে ৩০০ ফুট দূরে পাম্প বসানোর সুযোগ দিতে সম্মত হয়েছে। বিএডিসি ও বিদু্যৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেচ পাম্প চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।