শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের হটকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক

বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা মাফিক আগের দিন জানানোর অনুরোধ
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের হটকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক

ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াম। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে মৃদু্য শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। সেই হিসাবে রাজশাহী জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আদেশ জারির হটকারী সিদ্ধান্তে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রাজশাহী জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা।

গত ২০ জানুয়ারি রাজশাহীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় হঠাৎ রাত ১০টার দিকে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়ে ২১ ও ২২ জানুয়ারি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান। একইভাবে শুধুমাত্র ২১ জানুয়ারি একদিনের জন্য পাঠদান বন্ধের নির্দেশ দেন রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম। ওই রাতেই তাড়াহুড়ো করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্কুলের ফেসবুক পেজে বা ব্যক্তিগত আইডি থেকে পাঠদান বন্ধের কথা জানান। তবে রাতে এই নির্দেশনা দেওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক না জানতে পারায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে স্কুলে আসে।

রাজশাহী মহানগরীর একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক জানান, 'আমরা ছুটির বিষয়টি আগে জানতে পারিনি। স্কুলে আসার পর সকাল ১১টার দিকে ই-মেইলে নির্দেশনাটি পেয়েছি। ততক্ষণে সব শিক্ষার্থী ক্লাসে এসে উপস্থিত। তাই আর ছুটি দেওয়া হয়নি। তিনি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আগেই জানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান কর্তৃপক্ষকে।'

রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায়, স্কুলে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে গেছে। পরে পাঠদান বন্ধর নির্দেশনা দেওয়ায় তারা বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার পর রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে পাঠদান বন্ধ রাখার কথা জানান। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হয়ে যায়। পরে এই নির্দেশনা জানার পর তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানান। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে পাঠদান মঙ্গলবার অব্যাহত আছে।

রাজশাহী জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকরা জানান, 'স্যারদের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। প্রচন্ড ঠান্ডায় শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে আসার পর জানতে পারছি স্কুলে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো অভিভাবক আমাদের কটু কথাও শুনিয়ে দিচ্ছে।' এমন সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা মাফিক আগের দিন জানানোর অনুরোধ করেন তারা।

এদিকে গোদাগাড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মর্জিনা খাতুন জানান, 'আমার বাচ্চাটি এ্যাজমা, টনসিলসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। রাতে খবর নিয়েছিলাম আজ স্কুল বন্ধ থাকবে কিনা, তবে বন্ধ না থাকার কথা জানতে পেরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ে স্কুলে চলে গেছে। তার আগে আমার ছোট ছেলে নার্সারি ক্লাসে পড়ে তাকেও স্কুলে রাখতে যেতে হয়েছে।'

তিনি আরও জানান, খুব সকালে নিজেরা ও তাকে উঠিয়ে নাস্তা বানিয়ে খাইয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন জানতে পারছি স্কুল বন্ধ। হঠাৎ এমন নির্দেশনায় মেয়েকে আবার স্কুল থেকে আনতে হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, আসলে আবহাওয়ার বিষয়টি কখনো বেশি হচ্ছে, আবার কখনো কমে যাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমরা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই ডিডি স্যারের নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগের দিনে এসব বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়ার।'

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, 'আমরা গত সোমবার আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছিল ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামবে না। তাই পাঠদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তারা যেভাবে আমাদের বার্তা দিচ্ছে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে