মাদারীপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের কাছে বিশেষ করে শিশু-কিশোর, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য মাদারীপুর মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাদারীপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ডক্টর রহিমা খাতুন মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার ফলে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ মাদারীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শকুনি লেকপাড়ের পৌর শিশু পার্কের পূর্ব পাশে পুরাতন ট্রেজারি ভবনে মাদারীপুর মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি। উদ্বোধনের পর মিউজিয়ামটি আর আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি মিউজিয়ামটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এটা জেলার প্রথম মিউজিয়াম।
জানা গেছে, গত বছর উদ্বোধন হলেও মিউজিয়ামটি দর্শার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। এমনকি খোলা হয়নি মিউজিয়ামের প্রধান গেটও। এতে করে দীর্ঘ ৯ মাস লতাপাতার আড়ালে ছিল মাদারীপুরের একমাত্র মিউজিয়ামটি। 'মাদারীপুর মিউজিয়াম' নাম লেখা সাইন বোর্ডটিও লতা-পাতায় ভরে যাওয়ায় কারো চোখে পড়েনি।
সম্প্রতি সাংবাদিকরা লেখালেখি করার ফলে মিউজিয়ামটি দর্শানার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গল পরিষ্কার করে, নতুনভাবে মাদারীপুর মিউজিয়াম লেখা সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে সবার জন্য মিউজিয়ামটি উন্মুক্ত করা হয়। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিউজিয়ামটি খোলা থাকবে।
বর্তমানে মিউজিয়ামটিতে রয়েছে মনীষীদের ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী, কিছু প্রাচীন ঐতিহ্য, পুরানো ফ্যাক্স মেশিন, টাইপিং মেশিন, একুশে পদক প্রাপ্ত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেনের বেশ কিছু আঁকা ছবিসহ পুরানো কিছু জিনিসপত্র। মিউজিয়ামটি পরিপূর্ণভাবে সাজানোর কাজ চলমান রয়েছে।
মাদারীপুরের ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, মিউজিয়ামটির মাধ্যমে আমাদের জেলার নানা ইতিহাস ঐহিত্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। যা আগামী প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।
মিউজিয়ামের কিউরেটর ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল ইসলাম বলেন, মিউজিয়ামটিকে বর্তমান অবস্থানে আনতে জেলা প্রশাসনকে অনেক কাজ বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। পুরাতন ট্রেজারি ভবনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ভবনটিকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এই জাদুঘরে যে কোনো দর্শনার্থীর জন্য প্রবেশ ফি সম্পূর্ণ ফ্রি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও মাদারীপুর মিউজিয়ামের সভাপতি মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘর মাদারীপুর জেলাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।