যশোর অঞ্চলে আশাতীতভাবে বেড়েছে সরিষার চাষ
প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
দেশের দক্ষিণের জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। প্রতি বছর এ অঞ্চলে আশাতীতভাবে সরিষা চাষ বাড়ছে। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় ৯১ হাজার ১০৩ হেক্টর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৯৩ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২ হাজার হেক্টর জমি বেশি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
"তেল জাতীয় ফসলে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের" আওতায় তিন বছরের মধ্যে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে চাহিদার ৪০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে এ অঞ্চলের কৃষি অফিসগুলো। এছাড়া সরকারের বিশেষ প্রণোদনায় বাড়ছে সরিষার চাষ। অন্যদিকে সরিষা চাষে আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশ ও ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাহিদা পূরণে সরিষার চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে অঞ্চলে চাষ হওয়া সরিষা মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ করবে বলে জানিয়েছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে যশোর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর, ঝিনাইদহে ১৩ হাজার ২৯০ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫০৬ হেক্টর, মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৫০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৫০৬ হেক্টর। কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ১৪১ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে, চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৯ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৬ হাজার ৯৭৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৭ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে।
এর আগে ২০২২-২৩ মৌসুমে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় ৭২ হাজার ৯২৫ হেক্টর সর্ষে চাষ হয়েছিল। ওই বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৯০ হেক্টর। ফলে ১৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়।
কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, সরকারের বিশেষ প্রকল্প ও প্রণোদনার, সরিষা চাষ ও তেলের উপকারিতা নিয়ে সচেতনতামূলক উঠান বৈঠকের ফলে সরিষা চাষ বাড়ছে। ফলে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাব লাভবান হবে, অন্যদিকে জমিতে জৈব সারের ঘাটতি পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখছে এ সরিষা চাষ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভিটশ্বর গ্রামের কৃষক মন্টু দফাদার জানান, চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র দেড় হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন। কয়েক বছর যাবত সরিষার দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে তেলের দামও। তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরিষা একটি ভালো চাষ।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, সরকারের লক্ষ্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আগামী তিন বছরে ৪০ শতাংশ ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো। সেই লক্ষ্যে সরিষার চাষ বাড়াতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুম প্রকল্প মেয়াদের দ্বিতীয় বছর চলছে। এ বছর আমরা চাহিদার ৩০ উৎপাদন করতে পেরেছি।
তিনি আরও জানান, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজর কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। এ সব ঘাটতি পূরণে উৎপাদন যেন স্থানীয়ভাবে করতে পারি সে লক্ষ্যে ২০২২-২৩ বছরের জুলাই থেকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পস্ন্যান করা হয়েছে। পস্ন্যান অনুযায়ী সরকার প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করেছে। যশোর অঞ্চলের ৬ জেলার কৃষককে বিঘা প্রতি বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বারি সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে যা মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন সম্ভব হয়। যা বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ফলন হচ্ছে। সরকারের এ কর্মসূচির কারণে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছে। ফলে সরিষা চাষ এখন এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।