অনলাইনে বিপণন বাড়ায়, খেজুর গাছ রোপণ ও রস আহরণ বেড়েছে। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার লিটার খেজুর রস পাচ্ছেন গাছিরা, চলছে জমজমাট বেচাকেনা।
গত এক সপ্তাহ সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। তার মধ্যে রসের জন্য কাটা হয়েছে ১৮ হাজারের মতো। এখানে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারা গাছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, একটি গাছ থেকে গড়ে দৈনিক কমপক্ষে ৫ লিটার রস পাওয়া যাচ্ছে। এক লিটার রস বিক্রি করে গাছিরা গড়ে সর্বনিম্ন্ন দাম নিচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে পুরো উপজেলার ১৮ হাজারের মতো গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে রস সংগ্রহ হচ্ছে ৭০ হাজার লিটারের মতো। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষাধিক টাকা।
তারা জানান, খেজুরের রস ছাড়া বাঙালির শীতকালটা যেন জমেই না। চিরায়ত এ ঐতিহ্যেও এখন লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া। শহর-নগরের মানুষ ঘরে বসেই চুমুক দিচ্ছেন তাজা রসের গস্নাসে। সনাতন বাজার ব্যবস্থার বাইরেও এখানকার খেজুরের রস কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনেও।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী জেলা শহরসহ সোনাগাজী ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক অনলাইনে জমিয়ে তুলেছেন এ রসের হাট। জেলা শহরে স্বাদের এ রস যেন সোনার হরিণ। সোনাগাজী ছাড়া এ জেলার অন্য উপজেলার অনেক গ্রামেও সহজে মেলে না এ রসের দেখা। এমন পরিস্থিতিতে এসব খেজুর গাছ কাটার ব্যবস্থা করে রস সংগ্রহ করছেন ফেনীর একদল নতুন উদ্যোক্তা। গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি রস সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন তারা।
নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খেজুরের রস সংগ্রহ করে ভোজনবিলাসীদের চাহিদা মেটাচ্ছেন এসব উদ্যোক্তারা। অর্ডার পেলে রস পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরে ঘরে। অর্ধশতাধিক তরুণ উদ্যোক্তাসহ কয়েক শতাধিক মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি এ ব্যবসায়। অনলাইনে রসের এ হাটে দৈনিক বিকিকিনি হয় ১০-১২ লক্ষাধিক টাকা। অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে পুরো মৌসুম রসের এ বাজার কয়েক কোটি টাকার।
এ উদ্যোক্তাদের একজন ফেনীর উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজী উপজেলার আদর্শ গ্রামের যুবক মোহাম্মদ আলী। বছরের অন্য সময় ভিন্ন ব্যবসা করলেও শীতের পুরো মৌসুমে ব্যস্ত থাকেন রসের ব্যবসায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে গত মৌসুমেও সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকার খেজুর রস বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে বিগত মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার ইচ্ছে তার।
নেয়ামত নামের এক যুবক বলেন, এলাকার দেড় শতাধিক গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। তিনি জানান, সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মৌসুমে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার রস বিক্রি করা সম্ভব। রসে যাতে ইঁদুর-বাদুড় মুখ দিতে না পারে, নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য নেট দেওয়াসহ বিশেষ নিরাপত্তার কথাও জানিয়েছেন এ অনলাইন উদ্যোক্তা।
শুধু এ একজন নয়, ফেসবুক পেজ সহজ বাজারের রাশেদ, ই-ফাতাহ'র নিশাদ ও হ্যালো কলের হান্নানসহ এমন আরও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা অনলাইনে এ খেজুরের রসের হাট জমিয়ে তুলেছেন। ভোরে গ্রামে গিয়ে গাছিদের কাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। সহজ বাজারের রাশেদ জানান, অনলাইনে তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। মৌসুমি এ রস বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে সন্তোষজনক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেজুর গাছের রস বর্তমানে একটি অর্থকরী বিষয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনের কারণে বিপণনও বেড়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারাগাছ। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগও নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।