চাষাবাদের খরচ কম ও বেশি লাভ হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চাষিদের। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ভালো মানের সুতা উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে এ উপজেলার তুলা। তবে, চলতি মৌসুমে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ক্ষতি হওয়ায় ভালো ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তুলা চাষিরা।
এদিকে জানুয়ারি মাস থেকে উপজেলার দুটি তুলা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে ৩ দিন করে তুলা কেনা শুরু করেছে বিভিন্ন সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যা চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত। এবারের তুলার নির্ধারিত দাম ও আনুমানিক উৎপাদন হিসাব করে ধারণা করা হচ্ছে এ মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার বেশি তুলা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
কুষ্টিয়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ৭টি ইউনিটে ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রকারভেদে মণপ্রতি তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা। এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৯১০ জন তুলা চাষি দুই হাজার একশ' হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৩ মণ করে ফলন ধরা হয়েছে। এদিকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুসারে দেশের সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয় কুষ্টিয়া জেলায়। আর জেলার সবচেয়ে বেশি তুলা চাষ হয় দৌলতপুর উপজেলায়।
তুলার সঙ্গে থাকা বীজ থেকেও তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ভোজ্য তেল ও খইল। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এখানকার তুলার বাজার দর প্রতি বছর নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা।
উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ও ধর্মদহ হাইস্কুল মাঠে বসে তুলার হাট। এসব হাটে তুলা কিনতে এসেছেন কয়েকটি সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
আল মদিনা ইন্ডাস্ট্রির মালিক গোলাম সাবির জানান, তারা ৩০ বছর ধরে এ উপজেলা থেকে তুলা কিনছেন। এখানকার তুলা দুই অংশে ভাগ করে সুতা প্রস্তুত করেন। আর বীজ থেকে তৈরি হয় তেল ও খইল। এই তুলা দিয়ে তৈরি সুতা দেশের পোশাক শিল্পে কাজে লাগে।
উপজেলার বিলগাতুয়া এলাকার তুলা চাষি সাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার টানা বর্ষণের কারণে তুলা নষ্ট হয়েছে। তাই ফলন কমেছে। বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় আবাদি খরচও বেড়েছে। তাই এবার লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা কম।
সাহিদুল আরও জানান, তুলার বাজার দর মিল মালিকরা নির্ধারণ করেন। এটি সরকার ঠিক করে দিলে চাষিরা বেশি লাভবান হতেন।
আবুল হাসেম নামের আরেক চাষি জানান, এবার দুই ক্যাটাগরিতে তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি ফ্রেশ তুলা, আরেকটি গুটি তুলা। তিনি বলেন, তার নিজের জমিতে বিঘাপ্রতি চাষে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যারা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তাদের খরচ আরও বেশি হয়েছে।
মাহাবুল হোসেন নামের এক চাষি জানালেন, ফলন ভালো না হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। ৯ মাসের মতো সময় লাগে তুলার ফলন পেতে। তাই দাম বৃদ্ধির দাবি করেছেন এই চাষি।
কুষ্টিয়ার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন বলেন, 'গত মৌসুমের তুলনায় এবার তুলার চাষ বেড়েছে। আমরা চাষিদের তুলা চাষে আগ্রহ বাড়াতে নানারকম পরামর্শ দিচ্ছি। তুলা থেকে কম খরচে ভালো লাভ করা সম্ভব। আমরা আগামী মৌসুমে কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করব চাষিদের জন্য। তাছাড়া প্রতিনিয়ত চাষিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।'