বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
বসত ভিটা ও ফসলি জমি রক্ষার দাবি

বকশীগঞ্জে বর্ষার আগেই নদী ভাঙন আতঙ্ক!

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জামালপুরের বকশীগঞ্জে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা -যাযাদি

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে বন্যার আগেই নদী ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিগত দিনে নদী ভাঙনের শিকার হওয়া এসব মানুষ সবকিছু হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের দাবি আগামী বর্ষার আগে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অন্তত দুইটি গ্রাম হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে। তারা বাপ-দাদার ভিটেমাটিসহ ফসলি জমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে নদী ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া, নিলাখিয়া ও মেরুরচর ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী। বর্ষা শুরু হলেই ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী যেন আগ্রাসী হয়ে উঠে। বন্যার পদ ধ্বনি এলেই এই নদ ও নদী বরাবরের মতোই চিরচেনা রূপে ফিরে যায়। তাই বর্ষাকাল শুরুর আগেই নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গত বন্যায় মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারের চর খাপড়াপাড়া দশানী নদীর কড়াল গ্রাসে তিন কিলোমিটার ফসলি জমি ও অর্ধশতাধিক বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি একই ইউনিয়নের উজান কলকিহারা, ফকিরপাড়া, ভাটি কলকি হারা, বাঘাডুবি ও মাইছানিরচর এছাড়াও সাধুর পাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী, বাংগাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া গ্রামে প্রতি বছরই নদী ভাঙন হয়ে থাকে। এর মধ্যে চর আইরমারী গ্রাম এখন অনেকটাই বিলীনের পথে। মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের দশানী নদীর ভাঙনে ফসলি জমি ও ভিটা মাটি হারিয়ে নিঃস্ব এখন কয়েকশ' পরিবার।

বর্ষাকাল এলেই পালস্না দিয়ে বাড়ে নদী ভাঙন। বিশেষ করে বন্যার সময় নদী ভাঙনের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় ভাঙন কবলিত খাপড়া পাড়া ও চর আইরমারী গ্রামের মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

বারবার ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন এসব পরিবার। ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্য গ্রামে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। এ কারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা। তাই বন্যা বা বর্ষাকাল আসার আগেই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। এজন্য তারা নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসককের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে ভাঙনের শিকার মাদারেরচর খাপরা গ্রামের উসমান গনী বলেন, 'আমার বাড়িটি পাঁচবার দশানীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বারবার ভাঙনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে আমি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। তাই আগামী বর্ষাকালের আগেই ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার দাবি জানাই।'

মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, তার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে বর্ষার শুরুতেই নদী ভাঙন শুরু হয়। বিশেষ করে মাদারেরচর খাপড়া গ্রামে ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছরই মানুষ বসত ভিটা ও ফসলি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে এই গ্রামটি হারিয়ে যাবে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগেও সহযোগিতা করা হয়েছে। বর্ষার আগেই ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে