মেহেরপুরে কোল্ড ইনজুরির কবলে বোরো বীজতলা
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরে শৈত্যপ্রবাহে ঠান্ডা ও ঘনকুয়াশায় শীতকালীন বিভিন্ন ফসল ভালো হলেও বোরো বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে নাবি বীজতলার চারা পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বোরো ধান আবাদ করতে চারা সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কোল্ড ইনজুরির কারণে ধান রোপণ বা উৎপাদনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
মেহেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা হয়েছে বোরো বীজতলা। তবে যারা আগাম বীজতলা তৈরি করেছে তাদের বীজতলা নষ্ট হয়নি। এই শীতে অন্য ফসল গম, সরিষা, ভুট্টা সবজি চাষ খুব ভালো হয়েছে।
কৃষকরা জানান, প্রতি কাঠা জমি বীজতলার জন্য লিজ নিতে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা, ৮শ' টাকার বীজ, সার, সেচ, লেবার খরচ মিলে আরো হাজার টাকা খরচ করে ধানের চারা দিয়ে চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হিসাব মতে প্রতি কাঠা বীজতলার চারা দিয়ে চার বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব। বীজতলার যে অবস্থা তাতে কারো এক বিঘা, কারো দুই আড়াই বিঘা ধান রোপণ করা সম্ভব হবে। এদিকে গেল বছর প্রতি কাঠা জমির বীজতলার চারার দাম ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ বছর সেই চারা চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা কাঠা হাঁকা হচ্ছে। ফলে এতে বোরো উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে কৃষকের।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে তাড়াতাড়ি উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হলে চারার খুব একটা ক্ষতি হবে না। সার বিষ দিয়ে চারাগুলো সবল হলেই রোপণ করা যাবে এমন দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
জেলার সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠের বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, নাবি বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলো বাঁচাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ছত্রাকনাশক স্প্রেসহ বিভিন্নভাবে পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। এতে কতটুকু সফল হবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তারা।
সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের চাষি বদর উদ্দিন জানান, এবার চার বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য বীজতলা দিয়েছিলেন। আগাম দেওয়া চারা ভালো হয়েছে। তবে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে নাবী বীজতলার ৫০ ভাগ চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এই চারাতে তার কাঙ্ক্ষিত জমিতে ধান লাগানো হবে না। গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের চাষি সুবোদ মন্ডল জানান, এবার ঘনকুয়াশায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে সবার একই অবস্থা। ধানের চারা যে কিনে লাগাবেন তাও হবে না।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। ঘনকুয়াশার কারণে চারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের চারায় সালফার ও পটাশিয়াম ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে ছাত্রাকনাশক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে ঠান্ডায় সমলয় পদ্ধতির বীজতলায় কোনো ক্ষতি হয়নি। আগামীতে সমলয় পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন বাড়লে এ সংকট আর থাকবে না। এখন শৈতপ্রবাহ কেটে যেতে শুরু করেছে। তাপমাত্রাটাও বৃদ্ধি পাবে। রোদ উঠলে সঠিক পরিচর্যায় চারা রিকভার করবে।