অজানা কারণে মরছে তরমুজ গাছ
সমাধান না পেয়ে বিপাকে চাষিরা
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
গাঢ় সবুজ লতায় মোড়ানো বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজ গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে ফলও ধরেছে কোনো কোনো গাছে। কিন্তু হঠাৎ করেই শেকড় নিস্তেজ হয়ে একের পর এক মরছে গাছ। বালাইনাশক (কীটনাশক) প্রয়োগেও হচ্ছে না কোনো সমাধান।
দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ উৎপাদনে অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুটি চরে এভাবেই অজানা কারণে মরছে তরমুজ গাছ। ফলে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এটি কোনো রোগ, নাকি ভাইরাস-তা এখনো নির্ণয় করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে জানিয়ে কৃষি বিভাগ বলছে, এই মুহূর্তে খুবই অল্প পরিসরে গাছ আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর পরিধি যেন না বাড়ে, এ জন্য গাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী ও চরইমারশন চরের বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এই দুই চরেই ফলন্ত তরমুজ গাছ আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ার ঘটনা বেশি। তরমুজ চাষিরা বলছেন, আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। তা না হলে পাশের গাছও আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
কাউখালী চরের তরমুজ চাষি মাসুম সিকদার বলেন, 'আমি তিন কানি জমিতে তরমুজ দিছি। ১২ হাজার গাছের চারা ছিল। এখন তিন ভাগের একভাগই মরে গেছে। এখন দুই ভাগ আছে। তাও একের পর এক শেকড় এবং পাতা শুকিয়ে মরছে। এটার কারণ যে কি, বুঝি না। পানি দিচ্ছি, ওষুধ ব্যবহার করছি-কোনোটাতেই কাজ হচ্ছে না। অনেক টাকা খরচ করতেছি। ফল ধরেছে, এমন গাছও মরে যাচ্ছে। সবাই দাদন আর ঋণের টাকা এনে তরমুজ দিছে। এখন লোকসান হলে আমরা মাঠে মরব।'
ওই চরের আরেক চাষি মনির হাওলাদার বলেন, 'আমি সাত কানি জমিতে তরমুজ দিছি। আমার প্রায় তিন কানি জমির গাছ মরে গেছে। গাছ লাগানোর শুরু থেকেই মরছে। একদিকে লাগাই, আরেকদিকে মরে। সকালে দেখি ভালো, বিকালে দেখি গাছ মরে গেছে। কোনো ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। এখন চার কানি জমিতে গাছ আছে। তাও অল্প অল্প মরছে। যেভাবে মরছে, প্রজেক্ট থাকবেই না। সব বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। আমার তিন কানিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।'
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার উপজেলায় ইতোমধ্যে চার হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। তবে এই মৌসুমে সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং অনুকূল পরিবেশ থাকলে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। কিন্তু অজানা কারণে গাছ মরে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তরমুজ চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ৬-৭ হেক্টর জমির তরমুজ গাছ মারা গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামান গাছ মরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে চারটি ধারণা দিয়েছেন- 'এক. নেমাটোডা নামক সুতাকৃমির আক্রমণ। দুই. জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়া কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। তিন. একই জমিতে বার বার তরমুজ আবাদ। চার. কোনো পরামর্শ ছাড়াই অতিরিক্ত সার এবং বালাইনাশক (কীটনাশক) প্রয়োগ।'
এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'এই চারটির মধ্যে যেকোনো সমস্যার কারণে গাছগুলো মরতে পারে। কিন্তু সঠিক কারণ নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমাদের মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।'