মণিরামপুরে দুস্থদের দুম্বার মাংস ভাগ করে নিলেন জনপ্রতিনিধিরা!

যশোরের মণিরামপুরে দুস্থদের জন্য বরাদ্দের সৌদি আরবের উপহার দুম্বার মাংসে ভাগ বসিয়েছেন উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ উঠেছে ৪৭ কার্টন মাংসের মধ্যে খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম ইয়াকুব আলী নিয়েছেন ১৫ কার্টন, উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম দুই কার্টন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জলি আক্তার নিয়েছেন এক কার্টন। ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু নিজের বাসায় এক কার্টন ও রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন নিজের বাসায় ১৬ কেজি দুম্বার মাংস নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সৌদি আরব থেকে আসা কুরবানির দুম্বার মাংস প্রতি কার্টনে রয়েছে ৮ প্যাকেট। প্রতি প্যাকেট মাংসের ওজন ৩ কেজি। সে হিসেবে প্রতি কার্টনে মাংস রয়েছে ২৪-২৫ কেজি। গরিবের জন্য আসা এই মাংস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বণ্টনের কথা ছিল। তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ারের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুম্বার মাংস বিতরণ করিয়েছেন। এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুম্বার মাংসের কার্টন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাদের মাংস দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও কোনো কথা বলেননি। এছাড়া মাংসের পরিমাণের বিষয়ে ইউএনও এবং পিআইও অফিসের গোলাম সরোয়ারের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। ইউএনও বলছেন, মাংস এসেছে ৪৭ কার্টন। আর গোলাম সরোয়ার বলছেন, মাংস ৪৫ কার্টন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে পিকআপে ভরে মণিরামপুরে এই দুম্বার মাংস আসে। এরপর শুরু হয় ভাগবাটোয়ারা। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, ইউএনওর বাসার পাশে পিকআপ রেখে মাংস বিতরণ করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের সহকারী গোলাম সরোয়ার। এ সময় বিভিন্ন লোককে প্যাকেট হাতে মাংস নিতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে গোলাম সরোয়ার বলেন, '৪৫ কার্টন দুম্বার মাংস এসেছে। প্রতি কার্টনে ৮ প্যাকেট করে মাংস রয়েছে। ইউএনও আমাকে বন্টনের দায়িত্ব দিয়েছেন। নতুন এমপি এস এম ইয়াকুব আলীকে ১৬ কার্টন, উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ২ কার্টন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১ কার্টন, ১৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ১৭ কার্টন, ১২টি এতিমখানায় ১ কার্টন করে ১২ কার্টন মাংস দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য ১ কার্টন মাংস রাখা হয়েছে। বিতরণের সময় উপজেলায় কিছু গরিব লোক এসেছেন। তাদেরও দেওয়া হয়েছে।' এ বিষয়ে মণিরামপুরের ইউএনও জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মাস্টাররোলের কপি দেন। যেখানে যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ১৬ কার্টন, উপজেলা চেয়ারম্যান ২ কার্টন, ভাইস চেয়ারম্যান ১ কার্টন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫ কার্টন, ১৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ১ কার্টন করে এবং ১৩ এতিমখানায় ৬ কার্টন মাংস দেওয়ার কথা উলেস্নখ রয়েছে। ইউএনও জাকির হোসেন দাবি করেন, মাস্টাররোল অনুযায়ী মাংস বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ঝাঁপা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু শহরের বাসায় কার্টুন ভর্তি মাংস নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সব মাংস মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে। আর রোহিতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন দুম্বার মাংস নিজের বাসায় নিয়ে মেম্বরদের ডেকে ৯ কেজি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকি ১৬ কেজি চেয়ারম্যান নিজে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেন, ১৫-১৬ কেজি মাংস পেয়ে দুস্থ অসহায় দেখে দেওয়া হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান জলি আক্তার বলেন, 'কার্টনের মাংস গরিবদের মাঝে বিতরণ করেছি। কোনো অনিয়ম হয়নি।' নাজমা খানম বলেন, 'অফিস থেকে কিছু বিতরণ করেছি। আমার বাসায় ১ কার্টন পাঠিয়েছে। সেটাও বিতরণ করা হবে।' দুম্বার মাংসের বিষয়ে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য এস এম ইয়াকুব আলী বলেন, 'আমাকে এমপি হিসেবে ১৫ কার্টন দিয়েছে। আমার একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউনিয়নে ইউনিয়নে মাংস পাঠিয়ে দিয়েছি। এই মাংস দুস্থদের মাঝে বিতরণ নিশ্চিত করতে বলেছি।' তিনি দাবি করেন, এলাকায় তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন, ফলে এই সামান্য দুম্বার মাংস নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়।