শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

আজমিরীগঞ্জে মাধ্যমিকের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর সমন্বয়হীনতার ঝুঁকিতে

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আজমিরীগঞ্জে মাধ্যমিকের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর সমন্বয়হীনতার ঝুঁকিতে

আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে মাধ্যমিকে ভর্তি হতে না পাড়ার শঙ্কায় পড়েছে প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল। এদিকে ১৭ জানুয়ারি পেরিয়ে যাওয়ার পরও উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বছর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখানে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোতে শাখা রয়েছে ১২টি। প্রতি শাখায় ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। এ হিসেবে মোট শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে ৬৬০ জন।

একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ১০ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। মোট আবেদনের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কিন্তু নতুন কারিকুলামে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী মাত্র ৬৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। ফলে বাকি দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মাধ্যমিকে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

শিক্ষা বিভাগের দাবি- বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বলেছে, সমস্যা নিরসনে শিক্ষা অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্র জানায়, উপজেলাজুড়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সেকশন বাড়ানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা সময় সাপেক্ষ।

কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ২৫টি পদের বিপরীতে মাত্র ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপক অর্থায়ন প্রয়োজন। যা কোনভাবেই বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো সম্ভব নয়। এতে সমস্যা নিরসন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি করা যায়নি। ছেলেমেয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসছে, আর ফিরে যাচ্ছে।

এবিসি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইয়াছমিন বেগম জানান, 'আমার বিদ্যালয়ে দুই সেকশনে ১৮০টি আবেদন পড়েছে। বিপরীতে আমরা ১১০ জনকে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। লটারি হয়েছে তবে ভর্তি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এই মুহূর্তে আমাদের বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আছেন খন্ডকালীন দুই জনসহ মাত্র ১১ জন শিক্ষক। এ অবস্থায় নতুন করে আরও সেকশন কিভাবে বৃদ্ধি করব।'

ওই শিক্ষক আরও বলেন, স্কুলে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসে কান্নাকাটি করেছেন। অনেকে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। শিক্ষার্থী যথাসময় ভর্তি হতে না পারলে করে পড়ার শঙ্কা থাকে।'

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক জানান, ইতোমধ্যে শিক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাছাড়া স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে সহযোগিতা চেয়েছি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দ্রম্নত খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে। যাতে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুলস্নাহ জানান, 'বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেকশন বৃদ্ধি, শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে তারা উদ্যোগ নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করবে।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক দীপা আক্তার বলেন, 'আমার মেয়েটির লেখাপড়া এখানেই শেষ হয়ে গেল। কোনো স্কুলে ভর্তির সুযোগ হলো না। সব স্কুলে কোটা পূরণ হয়ে গেছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে