বৃহৎ মোকাম ও দেশের অন্যতম ধান-চাল উৎপাদনকারী বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁয় আমনের ভরা মৌসুমে চাল নিয়ে চলছে চালবাজি। এ মৌসুমে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু না কমে উল্টো বাড়ছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। মূল্য বৃদ্ধির দায় নিতে চায় না কেউই।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ মজুতদার ও মিল মালিকদের কারসাজিতে বাজার বেসামাল। এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে অবৈধ মজুত বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেলার ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে বাজারে অভিযানের তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সূত্রে জানা যায়, কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে মোটা জাতের চাল (স্বর্ণা-৫) ৫০-৫২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৫-৫৬ টাকা, বিআর-৪৯ চাল ৫৫ টাকা, কাটারিভোগ ও জিরাশাইল ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সুগন্ধি (চিনিগুঁড়া) জাতের চাল প্রতিকেজি ১১০-১২০ টাকা। খুচরা চাল ব্যবসায়িরা বলছেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য হওয়ায় ব্যবসায় মন্দা চলছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ক্রেতারা চাল কিনছেন না। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় ভোক্তারা বিপাকে।
নওগাঁ চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, হাট-বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে ধানের দাম। এতে প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) পাইকারি বাজারে বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। তবে আগামীতে বাজার কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তার।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার অবৈধভাবে ধান-চাল মজুত রাখার অপরাধে পৃথক অভিযানে ৬ জন ব্যবসায়ীকে একলাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে মহাদেবপুর উপজেলার তিনটি চালকলের মালিক এবং বদলগাছী ও মান্দা উপজেলার তিন চাল ব্যবসায়ীকে এ জরিমানা করা হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গত ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি ৩ দিনে নওগাঁর ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মওলা জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলে বলেন, ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন ধান-চালের প্রতিষ্ঠানে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মজুত করা ধান-চাল সঠিকভাবে খোলাবাজারে বিক্রি নিশ্চিত করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এবং একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) সমন্বয়ে টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি তদারকি করবেন। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।