শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

কুলাউড়ায় আলো ছড়াচ্ছে 'আলোর পাঠশালা'

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আলোর পাঠশালায় চলছে ছিন্নমূল শিশুদের পাঠদান -যাযাদি

কেউ ভিক্ষা করে, কেউ বা কাগজ কুড়ায়। বেশির ভাগ শিশুরই নেই পিতা-মাতা। কারো মা আছে কিন্তু বাবা কে? সে নিজেই জানে না। এক কথায় যাদের ছিন্নমূল বা পথশিশু বলা হয়। এদের সঙ্গে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত কিছু শিশুও রয়েছে। সবাইকে একসঙ্গে করে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার শেখানো হয় লেখাপড়া। কয়েকজন যুবক মিলে কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের খোলা মাঠে এই পাঠশালাটি শুরু করেছেন। আর এই পাঠশালার নাম দিয়েছেন 'আলোর পাঠশালা'।

'এসো খেলার ছলে পড়ি, নিজেকে গড়ি' এমন স্স্নোগান নিয়ে এই আলোর পাঠশালা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। মাঝে করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতার পর নতুন উদ্যোমে চলছে আলোর পাঠশালার কার্যক্রম। কিছু স্বপ্নবাজ কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এই উদ্যোগটি নেন। এখন যারা পাঠদানের সঙ্গে জড়িত তারা বেশিরভাগ কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। যারা প্রথম শুরু করেছিলেন তাদের অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপ আমেরিকায়। তাতে ক্ষতি নয় বরং এই আলোর পাঠশালার পথচালার আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। যারা দেশের বাইরে গেছেন তারা এটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য হয়েছেন অর্থের যোগানদাতা।

বর্তমানে আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ জন। তাদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন ১৫ জন শিক্ষক। প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচজন শিক্ষক পাঠদানের জন্য উপস্থিত থাকেন। বেলা আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত সরকারি বই পাঠ্যসূচি অনুসারে চলে পাঠদান। যারা পাঠদান করেন তারা কোন টাকা পয়সা নেন না, বরং সাপ্তাহিক একটা চাঁদা দেন। এই টাকায় প্রতি সপ্তাহে এখানে শিক্ষা নিতে আসা শিশুদের আপ্যায়ন করানো হয়। বিভিন্ন দাতারা আলোর পাঠশালাকে এগিয়ে নিতে স্কুলব্যাগ এবং ড্রেস দিয়ে তাদের অনুপ্রাণিত করেছেন।

আলোর পাঠশালায় পাঠদানের সঙ্গে জড়িত ইয়াছিনুর রহমান নাঈম জানান, চলতি বছর পাঁচজন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি আলোর পাঠশালা পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থদের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের একটি করে স্কুলব্যাগ, সার্টিফিকেট, খাতাকলম এবং স্কুলের টি-শার্ট উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও নতুন বছর উপলক্ষে সব শিক্ষার্থীর মাঝে খাতাকলম বিতরণ করা হয়েছে।

ইয়াছিনুর রহমান নাঈম আরও জানান, এই ধারাবাহিকতাকে ধরে রেখে সমাজের ছিন্নমূল এবং সুবিধাবঞ্চিতদের তারা আলোর পথে এগিয়ে নিতে চান। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়, সমাজকে কিছু উপহার দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দেখে যদি সারা দেশে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে তবেই তাদের সার্থকতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে