নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সদর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম মাঝে অবস্থিত উত্তর ফারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীর একমাত্র ভরসা এই বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়টি উন্নয়নে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত জটিলতায় আটকে যায় নির্মাণকাজ। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের মাঠেই পড়ে রয়েছে নির্মাণসামগ্রী। অন্যদিকে নতুন ভবনে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার স্বপ্নও রয়ে গেল যেন অধরাই।
সূত্র জানায়, উত্তর ফারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টি উন্নয়নে ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আসে যা জুন মাসে টেন্ডার আহ্বান হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় বিদ্যালয় নির্মাণের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়ে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত জটিলতায় সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে কাজ বন্ধের নোটিশ দেয় বিজিবি। এরপর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে চুক্তি অনুমোদন বাতিল হয়।
এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের বাড়ি সবার সীমান্তের কাছাকাছি। পাহাড়ি পথ, রোদ, বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও তাদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে জরাজীর্ণ টিনের ঘরে। গরমের সময় প্রচন্ড গরম আর বর্ষাকালে পড়ে পানি। বিদ্যালয়টির এই দুরবস্থার অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে। ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
স্কুলটিকে বাঁচাতে স্থানীয়রা নতুন আরেকটি জায়গা নির্ধারণ করলেও নির্মাণকাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। আগের টেন্ডার বাতিল হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিদ্যায়লটির নির্মাণকাজ। সীমান্তের এই বিদ্যালয় থেকে অন্য একটি বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটারেরও বেশি। যেখানে যেতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট পোহাতে হবে। তাই নতুন জায়গায় দ্রম্নতই নতুন ভবন নির্মাণের দাবি অভিভাবকদের।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শিউলি সোম বলেন, 'এই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন বরাদ্দ হওয়ার পর এই কাজ শুরু হতে হতে ২০২৩ সাল হয়ে যায়। গত বছরের মাঝামাঝি সময় নতুন ভবনের মালামাল বিদ্যালয়ে আসে। ঠিকাদার ও শ্রমিকরাও বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি খুঁড়ে নির্মাণকাজও শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই সীমান্ত জটিলতায় বিষয়টি সামনে এনে বিজিবি কাজে বাধা দেয়। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ। এমনি আমাদের নিজ খরচেই মাঠের মাটি ভরাট করতে হয়েছে। এখন আমাদের বিদ্যালয়ের জমিদাতা বিদ্যালয়ের জন্য নতুন আরেকটি জায়গা দিয়েছে। আমরা চাই এই জায়গায় যেনো দ্রম্নতই বিদ্যালয়টি নির্মাণ হয়।'
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, 'বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন জায়গায় দিয়েছে। ওই জায়গায় বিদ্যালয়টি নির্মাণের জন্য মহাপরিচালকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।'
দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, 'সীমান্তের একেবারে প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রাম দিয়ে এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছেও বিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ বিদ্যালয়নের কিছুদূর পর থেকেই ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া। তাই বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের কাজ শুরু হওয়ার পরপরই সীমান্ত জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে নতুন জায়গায় যেন দ্রুতই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয় এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।'
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী খোয়াজুর রহমান বলেন, 'বর্ডারের আইন রয়েছে যে সীমান্তের ১৫০ গজের ভিতরে কোনো কিছু নির্মাণ করা যায় না। বিদ্যালয়টি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলেও সীমান্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত জটিলতায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডারটিও বাতিল হয়।'