'যে শীত পড়ছে মনে হচ্ছে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। পা আড়ষ্ঠ যাচ্ছে চলতে পারছি না। তাই বলে কি পেটে শোনবে? না খাটলে পেট চলবে না। এ জন্য রিকশা নিয়ে বের হওয়া। চলতে পারছি না তারপরও আসতে হচ্ছে। রিকশা না চালালে তো পেটে শোনবে না।' এমনি অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন মেহেরপুরের গাংনী শহরের রেজাউল চত্বরে অপেক্ষারত রিকশাচালক আলীম।
তিন সন্তানের জনক আলীম জানান, 'প্রতিদিনই কাজের সন্ধানে বের হতে হয় তার। গেল এক সপ্তাহ ধরে যে ঠান্ডা আর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ তাতে বের হওয়া কষ্টকর। তার পরও সংসারের ঘানি টানতে বের হওয়া লাগে। শুধু আলীম নয়, তার মতো গরিব অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ জিবন জীবিকার তাগিদে শীতের সঙ্গে নিত্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
টানা তিন দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শেষে দুই দিন বিরতির পর বুধবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর শুক্রবার দিনের তাপমাত্রা বাড়লেও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের না হলেও বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন জীবিকার তাগিদে তাদের বের হতে হচ্ছে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ।
চেংগাড়া মাঠে তামাক ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন মহেশপুরের লতিফ ও রমজান। গায়ে গরম কাপড় জড়ানো আর পরিশ্রম করার পরও কাঁপছিলেন। হাতে পায়ে শিশির লেগে যেন তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বরফের মতো হয়ে গেছে। এত শীতে কাজে আসার ব্যাপারে তারা জানান, ঠান্ডা আর শীতের দোহাই দিলে তো পেট চলে না। সংসারের লোকজনের দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে হলে কষ্ট করতে হবে।
তামাক চাষি রফিকুল জানান, ঠান্ডার ভয় করলে তো আবাদ হবে না। ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য অনেক টাকা লাগে। আর এ টাকার ব্যবস্থা হয় চাষাবাদে। তাই চাষিদের শীত গরম দেখতে গেলে চলে না।
গাংনী ট্রাফিক মোড়ে ফুটপাতে জবুথবু হয়ে কিছু বরই পেয়ারা আর জলপাই নিয়ে বসে আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আসমত। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লোকজনের চলাচল সীমিত হওয়ায় বেচা-বিক্রি নেই বলে জানালেন তিনি। তবুও সংসারের প্রয়োজনে বসে থাকতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন টুপি ও আতর বিক্রেতা জামাল।
চুয়াডাঙ্গা হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের মতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় এমন শীত অনুভূত হচ্ছে। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় আন্তঃজেলা ও দূরপালস্নার যানবাহনগুলোকে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। সাধারণত শহরে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকছে।
উত্তর থেকে ধেয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই বেড়ে চলেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোটাভাইরাস ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ শ্বাসকষ্টের রোগ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ৪২ জনকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া গেছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রয়েছে ১০ জন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল আল মারুফ বলেন, শীত মৌসুমে মায়েদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের কেবল বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। হাতে-পায়ে মোজা ও গরম পোশাক পরাতে হবে। ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রম্নত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।