শিম শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজি। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সেই শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতকালীন শিমের জাত 'কার্তিকা'য় ভরে গেছে পুরো উপজেলা। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সবুজ- বেগুনী রঙের শিম এবং শিম ফুলে প্রকৃতি যেন একাকার। কনকনে এই শীতের মনোরমে শিমের ফুলে ভরে উঠেছে বাঁশখালীর মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী-নালা, ঘের-ডোবা এবং পুকুরের পাড়। এই মৌসুমে পুরো উপজেলা জুড়েই শুধু ৩৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শীতকালীন সবজি শিম। শিমের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্য থাকায় উপজেলার শিম চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক। এতে বেশি লাভে শিম বিক্রি করতে পারায় এই শীতকালীন শিম জাত 'কার্তিকা'য় স্বপ্ন বুনছেন বাঁশখালীর তিন হাজার কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালীপুর, চাম্বল, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বৈলছড়ি, জলদি, শিলকূপ, শেখেরখীল ও পুইছড়ি, নাপোড়া, বাহারছড়া এলাকাজুড়ে শুধু শিম আর শিম। বাঁশখালীর প্রধান সড়কের দুই পাশের শিম চাষও যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য। অন্য ক্ষেত, ধান ও মাছ ঘের, ধান জমির আইল, ডোবা, নালা, পুকুর পাড়ে চাষ করা হয়েছে শিম চাষ। পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও শুধু শিম আর শিম চাষ। অন্য সবজি ক্ষেতেও চাষ করা হয়েছে শীতকালীন এই কার্তিকা জাতের শিম। এতে ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দফায় দফায় তুলছেন শিম।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। অন্যদিকে পাইকারী দামে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা। তবে বাজারে সব থেকে বেশিই শিম বিক্রি করতেছে ক্ষুদ্র চাষিরা। এতে দেখা যায় দুই অথবা চার কেজি শিম নিয়ে বাজারে বিক্রি করছে এসব ক্ষুদ্র গ্রামীণ পরিবার। যা বিক্রি করে অনায়াসে চলছে তাদের সংসার। এতে এই শিম যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ।
উপজেলার শিম চাষিরা জানান, 'শীতকালীন শিম জাত হিসেবে এ বছর তারা চাষ করেছেন কার্তিকা জাত। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই মৌসুমে শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সঙ্গে অন্য মৌসুমের তুলনায় দামও অনেক বেশি। বর্তমানে খুচরা ও পাইকার বাজারে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতো।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, 'এই মৌসুমে ৩৭০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার কৃষক শিম চাষ করেছেন। এতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ টন করে সাড়ে ৬ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতেই এই জাতের শিম আবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে শিমের বেশ ভালো দাম রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে শিম প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
উপজেলার পূর্ব চাম্বলের শিম চাষি মোবারক আলী জানান, 'কৃষি অফিসের পরামর্শে কার্তিকা জাতের শিম চাষ করেছি। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো চাষ হয়েছে। দামও বেশ ভালো। তবে মাঝখানে ঘূর্ণিঝড়ে অতি বৃষ্টি হওয়াতে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে শিমের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।'
কালীপুরের শিম চাষি মোজাহার মিয়া বলেন, 'আমি ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেশ কিছু সবজি চাষ করেছি। গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের বৃষ্টিতে বেশ লোকসান হয়েছিল। তবে এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করা শিম বিক্রি করে সে লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠব।'
শিমের পাইকার জালাল উদ্দিন বলেন, মৌসুমের শুরুতে শিমের চাহিদা থাকত আগে। এখন পুরো মৌসুমে শিমের চাহিদা রয়েছে। তাতে জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও ভালো। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টন শিম দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে। এতে কষ্ট হলেও দাম থাকায় লাভের পরিমাণ কিন্তু বেশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, 'এ মৌসুমে বাঁশখালীর ৩৭০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শিম উৎপাদনে কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চাষিরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।