প্রবাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে সফল তারা
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর রাণীনগরের বেশ কয়েকজন যুবক দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসে ছিলেন। সেই প্রবাসে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশে এসে কেউ কারখানা খুলেছেন, আবার কেউ খেজুর গাছের বাগান করেছেন। কেউবা আবার চায়না দড়ি তৈরির কারখানা দিয়ে বসেছেন।
তারা বলছেন, বিদেশে কারখানায় যে কাজ করতেন দেশে এসে সেই কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। এছাড়া এসব কারখানায় এলাকার বেকার যুবকদের সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী কর্মসংস্থান। তাদের মতে, দেশের কয়েক লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা কাজে যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বিদেশ থেকে এসে বসে না থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশ ফেরতরা প্রয়োজনমতো অর্থ না থাকায় তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন না। ফলে সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে একদিকে যেমন নানা ধরনের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
বিলকৃষ্ণপুর ধোপাপাড়া গ্রামের ছলিম উদ্দীনের ছেলে আব্দুল মজিদ (৫০) বলেন, গত ২০০০ সালে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। একটানা দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০২০ সালে দেশে এসেছেন। সৌদিতে একটি অফিসে ক্লিনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার কর্মস্থল অফিসের আওতায় একটি খেজুরের বাগান ছিল। একটু সময় পেলেই তিনি বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে গাছের পরিচর্যাসহ বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। দেশে গিয়ে কোনো কর্ম করে খাবেন তা নিয়ে ভাবনায় পড়েন। একপর্যায়ে স্থির করেন দেশের মাটিতে খেজুরের বাগান করবেন। সেই আলোকে দেশে আসার সময় সৌদি থেকে ১১০ পিস আজওয়া ও মরিয়ম খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। পলিথিনে বীজ চারা দিয়ে গাছ গজানোর পর বাড়ির পাশে ৩০ শতক জায়গায় ৭৯টি গাছ রোপণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় গত মৌসুমে গাছে খেজুর ধরতে শুরু করায় সংশয় কেটে যায়। এখন পরিবার এবং গ্রামের লোকজন তার বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন।
তিনি বলছেন, বিদেশে প্রতি মাসে আয় করেছেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বাগানে খেজুর গাছের বয়স সাত বছর পরিপূর্ণ হলে ওই ৩০ শতকের বাগান থেকেই খেজুর এবং গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা বিক্রি করে বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় হবে বলে আসা করছেন তিনি। বাগান করতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছেন।
উপজেলার ভেটি গ্রামের বেলাল উদ্দীনের ছেলে গোলাম রাব্বানী (৪২) বলেন, তিনি সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ধার-দেনা করে গত ২০০৪ সালে মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রথমে একটি কোম্পানিতে কাজ করলেও পরে প্রায় ১৩ বছর ধরে একটি কাঠের ফার্নিচারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানেই ডিজিটাল মেশিনে বিভিন্ন কাঠের আসবাবপত্রে নকশিকাটার কাজ শেখেন।
তিনি বলেন, বিদেশি ফার্নিচারে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে বাড়িতে আসার আগেই ঠিক করেন দেশে গিয়ে অনুরূপ একটি কারখানা খুলবেন। গত দেড় বছর আগে বাড়িতে এসে আবাদপুকুর বাজারে ছয়টি রুম ভাড়া নিয়ে প্রায় ১০-১২ লাখ টাকায় কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রে নকশি কাটার ডিজিটাল মেশিন কেনেন। এরপর 'মেসার্স শারমিন ফার্নিচার এন্ড ডোর' নামে কারখানা খুলেন।
তিনি জানান, বর্তমানে একজন ডিজাইনারসহ ৭জন কর্মচারী কারখানায় কাজ করছেন। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। কারখানা পুরোদমে চালু হলে বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রাণীনগর উপজেলার উজালপুর গ্রামের সাহেব আলীর স্ত্রী তহমিনা বিবি বলেন, তার স্বামী মালয়েশিয়াতে গিয়ে দড়ি তৈরির একটি কারখানায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ করেছেন। সেই কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশে এসে আবাদপুকুর বাজারে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে মেশিনপত্র কিনে চায়না দড়ি তৈরির একটি কারখানা খুলেছেন। কারখানায় প্রায় ২০-২৫ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট এবং নানা প্রতিকূলতার কারণে গত ৬ মাস আগে কারখানা বন্ধ করে আবারো মালোয়েশিয়ায় চলে গেছেন। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কেটে গেলে দেশে এসে আবারো কারখানা চালু করবেন।
রাণীনগর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ২০১৫ সালের পর ২০২৩ সালের মধ্যে বিদেশ থেকে এসে যারা খারাপ অবস্থায় আছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রোজেক্টের আওতায় তাদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। হয়তো সরকার কেবলমাত্র তাদের সহায়তা করতে পারে। এছাড়া যুব উন্নয়ন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বেকার যুবকদের ঋণ সহায়তা করা হয়ে থাকে।