পিতা মারা গেছেন ৭-৮ বছর আগে। তখন থেকেই বড় ভাই হাত-পা অবশ হয়ে পঙ্গু প্রায়। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। মায়েরও বয়স হয়েছে। বসত ভিটা ছাড়া জমিজমা বলতে কিছুই নেই তাদের। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে কষ্ট করে বিএ পাস করেন সাবানা খাতুন। শিক্ষকতার চাকরি নেন একটি বে-সরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে। বাড়ির পাশেই স্কুল। শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি সংসারের কাজও করতেন। কিন্তু বছর দুয়েক আগে বড় ভাইয়ের মতো তার হাত-পা অবশ হতে শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে। চিকিৎসা করিয়েছেন বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে দুই হাত-পা অবশ হয়ে তিনিও শয্যাসায়ী। টাকার অভাবে চিকিৎসাও বন্ধ। এ অবস্থায় কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে পরিবারটির।
সাবানার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের চন্দরিয়া তালতলা গ্রামে। পিতার নাম আমির উদ্দীন। টিনের ছাপড়া মাটির ঘরে মাতা রহিমা বেওয়া আর বড় ভাই আব্দুর রহিম লিটনসহ বসবাস করেন। কয়েক বছর আগে ঝড়ে ঘরের পশ্চিম পাশের একটি দেওয়ালের কিছু অংশ ভেঙে যায়। মেরামত করতে পারেননি। পুরাতন টিন দিয়ে কোনো মতে বেড়া দিয়ে রেখেছেন।
সাবানার মা রহিমা বেওয়া জানান, অন্যের জমি চাষ এবং মাঝে মধ্যে অন্যের বাড়িতে কামলা খেটেই তাদের সংসার চলত। ৭-৮ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। ছোট বেলা থেকেই বড় ছেলে লিটনের হাত পায়ে সমস্যা। ঠিকমতো হাটতে পারতো না। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু ভালো হয়নি। তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে অচল হয়ে পড়ে আছে। হাঁটতে পারে না। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। অন্যের সহযোগিতা ও প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে কোনোরকম সংসার চালিয়েছেন তাদের। এ অবস্থায় মেয়ে সাবানা সংসারের হাল ধরতে কষ্ট করে চন্দরিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করে একটি সংস্থার স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেয়। কিন্তু দুই বছর আগে মেয়ে সাবানার হাত-পায়েও সমস্যা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা খারাপের দিকে যায়। সাধ্যমতো চিকিৎসা করেও লাভ হয়নি। বর্তমানে অবশ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। চাকরিও নেই। ঘরে খাবারও নেই। টাকার অভাবে মেয়ে এবং ছেলের চিকিৎসা বন্ধ আছে।
এলাকার শুকুরউদ্দীন কালুসহ বেশ কয়েকজন জানান, পরিবারটি খুবই অসহায়। সংসার চালানোর মতো কোনো লোক নাই। দুই ভাই-বোন বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছে। তাদের উন্নত চিকিৎসা করানো দরকার। টাকার অভাবে করাতে পারছে না।
জাবরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজখবর নেবেন এবং তার পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করবেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রহমান সোহান বলেন, এটি নিউরোলোজিকাল সমস্যা। ঠিক করে বলা যাচ্ছে না কি হতে পারে। উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, রহিমা বিধবা ভাতা পান। তার অচল দুই ছেলেমেয়ের জন্য সরকারিভাবে সহায়তা করার সুযোগ থাকলে অবশ্যই করা হবে।