ফটিকছড়িতে একটি সড়ক বদলে দিতে পারে পুরো এক গ্রাম
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামে একটি রাস্তার কারণে শত-শত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। দেখে মনে হয় যেন জমির ছোট আইল। মাটির রাস্তাটিতে ২০ ফুটের একটি কালভার্ট হলেও হয়নি ব্রিক সলিং বা নতুন কোনো রাস্তা। ভুক্তভোগী জনতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। সরকারের কাছে তারা দ্রম্নত নতুন ব্রিক সলিং রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু কালভার্ট প্রকল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তায় পাইন্দং খালের ওপর ১টি ২০ ফুট কালভার্ট নির্মাণ করেন। ওই কালভার্টের উত্তর-দক্ষিণ উভয় দিকে গ্রামের ভেতরে চলে গেছে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রধান রাস্তাটি। কালভার্টটি নির্মিত হওয়ার পরে প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির এ সংযোগ সড়কে।
জানা যায়, রাস্তাটি দিয়ে স্থানীয়রাসহ প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। এ গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মাদরাসা, বাজার, বড় মসজিদ, ঈদগাঁহ মাঠ ও কবরস্থান।
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ গ্রামীণ রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগী হয়ে গেছে। রাস্তার প্রস্থ অত্যন্ত ছোট, জমিনের আইলের মতো। এই রাস্তা দিয়ে ৩ জন লোক একসঙ্গে হেঁটে যেতে পারেন না। কালভার্টের উত্তর-দক্ষিণ উভয় পাশে রাস্তাটি অনেক সরু। রাস্তা দিয়ে ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করা যায় না। দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সিএনজি গাড়ি অন্যত্র রেখে প্রায় এক কিলোমিটার মাটির রাস্তা হেঁটে বাড়ি যান। বৃষ্টি হলে এ রাস্তা ব্যবহারকারী জনসাধারণ পায়ের জুতা হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। তখন হেঁটেও চলাচল করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
যাতায়াতের অসুবিধার কারণে বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও অজপাড়াগাঁয়ে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, বড়-ছোট হাটবাজার, মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি স্কুলে যেতে হলে প্রায় ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে পেলাগাজি-কাজিরহাট-হেঁয়াকো সড়কে আসতে হয়। এত দূর হাঁটার পর কার্পেটিং সড়কে গাড়ির দেখা মিলে।
এ গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ সম্রাট বলেন, 'আমি বিদেশ থেকে আসার কিছু পরে আত্মীয়-স্বজন আসেন আমার বাড়িতে। ওনারা বলেন, কার্পেটিং সড়ক থেকে হেঁটে অনেক কষ্টকর, হেঁটে হেঁটে পা ব্যথা হয়ে গেছে। মাটির রাস্তার ধুলাবালি কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।'
এক নারী পথচারী বলেন, 'সিএনজি গাড়ি চলে না। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। গর্ভবতী নারীদের যাতায়াতে যে কি কষ্ট হয়, সেটা বইলা বোঝানো যাবে না।'
স্থানীয় বাসিন্দা করিম বলেন, 'আমরা গ্রামবাসী চরম ভোগান্তিতে আছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে এ ধরনের রাস্তা কোথাও আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমাদের কষ্ট চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। শুধু দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ভৌমিক বাড়ির সংযোগ রাস্তাটির কাজ হয় না। একই ইউনিয়নের অন্যান্য এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক রাস্তা-সড়কের কাজ হচ্ছে।'
পাইন্দং ইউপির ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'রাস্তাটা কীভাবে মেরামত করা যায় এ ব্যাপারে আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।'
পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ছরওয়ার হোসেন বলেন, 'বিগত বছরে তেমন কোনো বরাদ্দ পাইনি। রাস্তাটি উঁচুনিচু, এটা প্রথমে মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। বর্তমানে মাটির দামও বেশি। যেহেতু ২০ ফুটের ব্রিজটি করা হয়েছে রাস্তাও হবে। নতুন সরকার গঠন হয়েছে এবার এ কাজটিও হবে।'
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকল্প বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেব।'