বঙ্গোপসাগরে বেপরোয়া চিংড়ি শিকার
হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য শৃঙ্খল
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
বঙ্গোপসাগরে অবাধে শিকার করা হচ্ছে ছোট ছোট চিংড়ি, যা পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে ভুলা চিংড়ি হিসেবে পরিচিত। তবে ছোট প্রজাতির এই চিংড়ি শিকার করতে গিয়ে অন্য মাছের পোনাও মারা পরছে। আবাধে এই মাছ শিকার চলতে থাকলে তা দেশের মৎস্য খাতের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন মৎস্য খাতের গবেষকরা।
প্রতি বছর শীতের শুরুতে কয়েক হাজার ট্রলার বিশেষ এক ধরনের নেট নিয়ে ছোট জাতের চিংড়ি শিকার করে। ছোট ফাঁসের নেট ব্যবহার করে অবাধে শিকার করা হয় চিংড়ির এই নির্দিষ্ট প্রজাতি। যা সাধারনত শুটকি তৈরিতে বেশি ব্যবহার হয়। তবে এই মাছ শিকার করতে যে জাল ব্যবহার হয় তাতে অন্য মাছের পোনাও মারা পড়ছে।
সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, কুয়াকাটাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় জেলেরা সাগর থেকে যে ভুলা চিংড়ি শিকার করে নিয়ে আসছেন এর সঙ্গে ইলিশ, পোয়া, ছুড়ি, বাইলা, লইট্যা, ফাইসা, চন্দনাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর বাচ্চাও আটকে মারা গেছে।
পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আলীপুর ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের দুই পাশেই এসব ভুলা চিংড়ি রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করতে দেখা যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় এসব চিংড়ির মধ্যে অন্য মাছের পোনার অস্তিত্ব রয়েছে। পাশপাশি বিভিন্ন প্রজাতির কাকড়াসহ জলজ প্রাণীও দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ভুলা চিংড়ির শিকারের নামে সাগর থেকে নির্দিষ্ট একটি জাতের মাছ এভাবে অবাধে শিকারের ফলে মাছের খাদ্য শৃঙ্খলে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সাগরে বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণী বসবাস করে। এসব প্রাণীর খাদ্যের সংস্থান একটি চক্র অনুসরণ করে হয়। কোন একটি নির্দিষ্ট প্রজাতি এভাবে তুলে নিলে তা অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া এই মাছের সঙ্গে অন্য মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। যার ফলে মাছ শিকারের এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।'
তবে এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, 'এ মাছটি দেশের আমিষ উৎপাদনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া শুটকি তৈরি ও মাছ, মুরগী, গবাদী পশুর খাবার তৈরিতেও এটি বেশ জনপ্রিয়। এটি শিকার করার বৈধতা কিংবা ঝুঁকির বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণা করে কার্যকর পদক্ষেণ নেওয়া হবে।'