মদের দোকানে অবৈধ ক্রেতার ভিড়
নওগাঁ জেলাজুড়ে মাদকের ছড়াছড়ি
প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বরেন্দ্র অঞ্চল (নওগাঁ) প্রতিনিধি
দেশের সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁর শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, পেন্টাডল, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ ও চোলাই মদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত-অপ্রচলিত মাদকদ্রব্যে ছেয়ে গেছে এখানকার অলিগলি। অনেকটাই চাল-ডালের মতো সহজলভ্য। কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে; আবার কখনো তাদের সামনেই চলছে বেচাকেনা। এমনকি 'হোম ডেলিভারিও' হচ্ছে মাদকের। শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সরবরাহকারী চক্র। এছাড়াও সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নওগাঁ ও পার্শ্ববর্তী সান্তাহারে দেশি বাংলা মদের বৈধ দোকানে বাড়ছে অবৈধ ক্রেতার ভিড়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের তৎপরতার কারণেই মাদক ও কারবারিরা ধরা পড়ছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। জড়িতদের দ্রম্নত আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় অন্তত ছয় শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ স্পটই বেশি। দুপুরের পর থেকেই ওইসব স্পটে মাদকসেবীদের মোটরসাইকেল মিছিল শুরু হয়। জমজমাট আসর চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। নওগাঁ সদর, মান্দা, মহাদেবপুর, বদলগাছী, আত্রাই, রাণীনগর, পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলার অলিগলিতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত-অপ্রচলিত মাদক। অল্প বয়সেই মাদকের বিষাক্ত নীল ছোবলে পথে বসে যাচ্ছে অনেকেই। এমনকি বেশি টাকা খরচ করলে হোম ডেলিভারি হচ্ছে মাদকের। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় মাদকের দাপট সবচেয়ে বেশি। এই দুটি উপজেলায় সক্রিয় আছে ৫০টি বড় সিন্ডিকেট।
এদিকে, নওগাঁ ও পার্শ্ববর্তী সান্তাহারে দেশি বাংলা মদের বৈধ দোকানে বাড়ছে অবৈধ ক্রেতার ভিড়। সেখানে অনুমোদিত সেবীদের কাছে মদ বিক্রির নিয়ম থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও যুবকদের কাছে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর বটতলী এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি চোলাই মদের কারখানা। সেখানে বছরের পর বছর প্রতিদিন ২৫০-৩০০ লিটার মদ উৎপাদন করে এলাকার মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করছে চক্রটি।
স্থানীয় সচেতন মহল ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ কোনো তৎপরতা নেই। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের আটক করলেও গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফতেপুর জয়বাংলা মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩৫ কেজি গাঁজাসহ আব্দুল শুকুর নামে এক কারবারিকে আটক করের্ যাব-৫ এর সদস্যরা। এ সময় গাঁজা পরিবহণ করা একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে। আটক শুকুর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার বাসিন্দা এবং ওই কাভার্ডভ্যানের চালক। কাভার্ডভ্যানটি কুমিলস্না থেকে নাটোর হয়ে রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে র?্যাবের একটি দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে জেলার বদলগাছী উপজেলার মাহমুদপুর গ্রাম থেকে সুভাষ কুজুর নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫ কেজি গাঁজা। গ্রেপ্তার সুভাষ কুজুর মাহমুদপুর গ্রামের বারতু কুজুরের ছেলে। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের কচুকুড়ি ও গোপালকৃষ্ণপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে এক কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকরা হলো, কচুকুড়ি গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন, নিমাই চন্দ্রের ছেলে রিপন কুমার ও গোপালকৃষ্ণপুর গ্রামের তরফদার পাড়ার বিদু্যৎ হোসেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে নওগাঁয় মোট চারটি বাহিনী কাজ করে। তাদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক চলছে। মাদক উদ্ধারসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বৈধ দেশীয় মদের দোকানে অবৈধ ক্রেতার কাছে মদ বিক্রির বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। মদের দোকান সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে দাবি করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, গত মাসে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেন তিনি।