টাঙ্গাইল ও মান্দায় শত বছরের পৌষ সংক্রান্তির মেলা

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
টাঙ্গাইল ও নওগাঁর মান্দায় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পৌষ পার্বণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌষ সংক্রান্তির মেলায় হাজারও মানুষের ঢল নামে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো বিস্তারিত খবর- স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাপড়া বিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সৌন্দর্যের রানি হিজল গাছের আঙিনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পৌষ সংক্রান্তি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার দিনব্যাপী মেলায় পূজা-অর্চনায় বিভিন্ন এলাকার হাজারও মানুষের ঢল নামে। জানা গেছে, বাঙালি সংস্কৃতির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ মাসের শেষের দিন বাসাইলের চাপড়া বিলের মাঝখানে শত বছরের সিদ্ধেশ্বরী হিজল গাছের আঙিনায় যুগ যুগ ধরে পৌষ সংক্রান্তির মেলা বসে থাকে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হাজারও দর্শনার্থীর ভিড় জমে। তারা দিনব্যাপী পূজা-অর্চনাসহ নানা আয়োজন প্রত্যক্ষ করেন। এ মেলা উপলক্ষে হরেক পণ্যের শতাধিক দোকান বসে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মুসলমান নারী-পুরুষ-শিশুদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ কোলাহল মুখর হয়ে ওঠে। মেলায় আসা পলাশ সূত্রধর জানান, ছোট সময় থেকে দেখে আসছেন- প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষদিন হিজল গাছের নিচে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছোট সময় দাদার সঙ্গে মেলায় আসতেন- এবার পরিবার নিয়ে এসেছেন। মনের আশা পূরণের মানত ছিল, তা দিয়ে গেলেন। তিনি বিশ্বাস করেন- ভগবান তার আশা পূরণ করবেন। মিরিকপুর এলাকার দুখিরাম পাল জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি উৎসব পৌষ সংক্রান্তি। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষের দিন এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের বাড়িতে নানা ধরনের পিঠা-পুলি তৈরি করেন। এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। আত্মীয়স্বজন প্রত্যেকে প্রত্যেকের বাড়িতে বেড়াতে যান, পিঠা-পুলি খান। যুগ যুগ ধরে হিজল গাছের আঙিনায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিজল গাছের নিচে পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। অনেকই মানত হিসেবে ঘটি-বাটিতে দুধ-বাতাসা-কদমা নিয়ে আসেন। বাসাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহেল জানান, প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষের দিন অনুষ্ঠিত এ মেলায় হাজারও দর্শনার্থী ভিড় করে। তাদের যাতায়াতের জন্য একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সবার সহযোগিতায় দ্রম্নত সড়কটি নির্মাণ করা হবে। বাসাইল থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, বাসাইলের বাসুলিয়ায় হিজল গাছের সামনে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মান্দায় গ্রামীণ সোমবার দিনব্যাপী উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের তানইল গ্রামের লিলাবাজার সংলগ্ন আদিবাসী পাড়ার জঞ্জালির মন্ডবে, কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোটমুলস্নুক গ্রামের জয়বাংলা মোড়ে, প্রসাদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে বিনয় বাজারের উত্তর পাশের বিলের মধ্যে সন্যাস তলা এবং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গোঁসাইপুর গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন রকমের দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। জয়বাংলা মোড়ের পৌষ পার্বণ মেলা পরিদর্শন করেন নওগাঁ-৪ মান্দা আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ (গামা)। এ সময় মান্দা থানার ওসি মোজাম্মেল হক কাজী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। এ ব্যাপারে ২নং ভালাইন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর এই দিনে এ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারও করা হয়েছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তানইল আদিবাসী পাড়ার গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী মেলাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে 'পুষণার মেলা' নামেও পরিচিত। মেলাটি বসছে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। তানইল, চকবাবন, বৈলশিং, মোয়াই, বেজোড়া, বৈদ্যপুর, নিমবাড়িয়া, আয়াপুর, জংলিপাড়া, তুডুকগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী-পুরুষ এ মেলায় এসে দেশীয় সংস্কৃতি উপভোগ করেন। মেলাগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এসব মেলায় মুসলমানসহ অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। মেলায় উপজেলার বৈলশিং গ্রাম থেকে বিভিন্ন রকমের ফুল বিক্রির জন্য আসেন আশিক। তিনি বলেন, বাবা-দাদার সময় থেকে এই মেলায় ফুল বিক্রি করে আসছেন। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে। এজন্য বেচাকেনা খুব ভালো হয়। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নরেন্দ্রনাথ বলেন, প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির আগের দিনে মেলাটি বসে। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূর-দূরান্তের মানুষ এখনও আসে মেলায় যোগ দিতে। সে কারণে সব ধরনের সুবিধা রাখতে আয়োজক কমিটি সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।