নদীতে কমছে মাছ, কষ্টে চলছে জেলেদের জীবন

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীরে নোঙর করা ছোট নৌকায় জাল সিলাইয়ে ব্যস্ত কয়েকজন জেলে -যাযাদি
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহারপুর পুরান নোয়াহাটির বাসিন্দা গিরিন্দ্র চন্দ্র দাস (৭০)। কয়েক প্রজন্ম ধরে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে মাছ শিকার করে চলছে গিরিন্দ্র দাসের পরিবারের জীবন জীবিকা। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ দুরূহ হয়ে পড়েছে গিরিন্দ্র দাসের। তাই তার পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়। হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় ৪১ হাজার ২৯৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তার মধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৩ জন। শুধু গিরিন্দ্র চন্দ্র দাসই নন উপজেলার বদলপুর, সদর ইউনিয়নের রনিয়া, নোয়ানগর, পৌরসভার ইলামনগর, জলসুখা ইউনিয়নের ঝালহাটিসহ উপজেলার অন্তত কয়েক শতাধিক জেলে পরিবার ইতোমধ্যে পেশা বদল করে যুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়। সরেজমিনে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীরে বাঁশ মহালের ভাটিতে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা সাত থেকে আটটি ছোট নৌকা। তার মধ্যে ১৪ জনের একটি জেলের দল তার তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েকজন মিলে জাল মেরামত করছেন। কয়েকজন আবার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ও শীত কুয়াশা থেকে বাঁচার জন্য বাঁশ এবং পলিথিন দিয়ে নৌকায় তাঁবু তৈরিতে ব্যস্ত। এ সময় জেলে গিরিন্দ্র চন্দ্র বলেন, 'ছোট বেলা থেকে বাবার হাত ধরে এ পেশায় যুক্ত হয়ে জীবন জীবিকা চালিয়ে বর্তমানে শেষ বয়সে এসেছি। একসময় নদ-নদীতে প্রচুর মাছ ছিল, খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত। তাই জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। তাদের ঘরে অভাব ছিল না। এখন প্রভাবশালীরা খাল-বিলগুলো লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। আর নদ-নদীতে নেই মাছ। তাই দুর্দিন যাচ্ছে আমাদের পরিবারগুলোর মধ্যে।' তিনি আরও বলেন, 'শীতের রাতে সারা রাত ঠান্ডা পানিতে জাল টেনে একটি আইড় মাছ পেয়েছি মাত্র। সেটি বাজারে ২ হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছি। তা দিয়ে আমাদের দলের সব সদস্যের খাবার, তারপর সমান ভাগে বণ্টন করে বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সাংসারিক খরচের জন্য পাঠাতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার নদীতে জাল ফেলব।' আরেক জেলে হরি দাস ও সাজু দাস জানান, আগের মতো নদীতে মাছ নেই। যদি জালে মাছ আটকা পড়ে তাহলে বাড়িতে চুলা জ্বলে। না পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস থাকতে হয়। তবে তারা সরকারিভাবে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি। তাই তারা প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে সরকারিভাবে ভাতার আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন। ব্যবসায়ী সুহেল রানা বলেন, গত কয়েক বছর আগেও বাজার থেকে ২০০ টাকার মাছ কিনে নিলে আট থেকে ১০ জনের পরিবার দুই বেলা চলত। বর্তমান সময়ে হাজার টাকার মাছ কিনলে এক দিনও চলে না। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৩ জনের নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। সরকারিভাবে সাহায্যে সহযোগিতার স্কিম এ বিভাগের মধ্যে নেই। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, 'জেলার হাওড়াঞ্চলের জেলেদের মাছ আহরণ বন্ধ সময়ে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। জেলেদের যাতে সহযোগিতা করা যায় এজন্য আমরা একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে জেলার প্রকৃত মৎস্যজীবীরা দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবেন বলে আশা করছি।'